২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাটসহ স্থাবর সম্পত্তির প্রকৃত বিক্রয়মূল্য ও দলিল মূল্যের ব্যবধান দূর করতে একটি খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করেছে রাজস্ব বাস্তবায়ন বিভাগ (সাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড)। এই খসড়া নীতিমালা আগামী ১৪ মে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় অনুমোদন পেতে পারে। এছাড়া আগামী ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করবেন, যেখানে জমি ও ফ্ল্যাটের প্রকৃত মূল্য ও দলিলমূল্যের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়ে ঘোষণা থাকতে পারে বলে জানা গেছে।
আইন অনুযায়ী জমি ও ফ্ল্যাটের বিক্রয়মূল্যের ওপর কর পরিশোধের দায়িত্ব বিক্রেতার হলেও বাংলাদেশে বাস্তবে এই কর ক্রেতাকেই পরিশোধ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি তুলে ধরেন রাজস্ব বাস্তবায়ন বিভাগের সচিব আবদুর রহমান খান। তিনি জানান, দলিলমূল্য ও প্রকৃত বিক্রয়মূল্যের ব্যবধান দূর করতে একটি কনসেপ্ট পেপার প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে বেশ কিছু কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করতে আগামী বুধবার অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো যদি বাজারমূল্যের সঙ্গে মৌজা মূল্য হালনাগাদ করতে সক্ষম হয়, তাহলে সরকার আগামী বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাটের করহার কমিয়ে দেবে।
বাংলাদেশে জমি ও ফ্ল্যাটের প্রকৃত ক্রয়মূল্য ও দলিলমূল্যের ব্যবধান একটি ওপেন সিক্রেট বা প্রকাশ্য গোপন তথ্য। কর ফাঁকি ও কালো টাকা বিনিয়োগ গোপন রাখতে ক্রেতা ও বিক্রেতারা ইচ্ছাকৃতভাবে দলিলে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্য উল্লেখ করে থাকেন, যা সাধারণত নির্ধারিত মৌজা মূল্যের ওপর ভিত্তি করে হয়।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সময়েও এই ব্যবধান কমাতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। সে সময় মুহিত বলেছিলেন, দলিলমূল্য কম দেখানোর ফলে সরকার শুধু রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, বরং এতে বিক্রেতার হাতে থাকা অর্থের একটি বড় অংশ অপ্রদর্শিত বা অবৈধ আয়ে পরিণত হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে মৌজা মূল্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হয় না। একই মৌজার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের জমি থাকায় তাদের মূল্যে বড় ধরনের ব্যবধান দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে তিনি রাজধানীর গুলশান মৌজার কথা তুলে ধরেন। তার ভাষায়, গুলশান এভিনিউ’র জমি বা ফ্ল্যাটের মূল্য মাদানী এভিনিউ’র তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হলেও, একই মৌজার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দলিলের সময় কমদামের দিকটি কাজে লাগানো হয়। ফলে গুলশান এভিনিউ’র মতো এলাকাতেও মাদানী এভিনিউ’র কম মৌজা মূল্য অনুসরণ করে দলিল সম্পন্ন করা হয়।
তিনি জানান, জমির প্রকৃত মূল্য ও দলিলমূল্যের মধ্যকার অসঙ্গতি দূর করতে রাজস্ব বাস্তবায়ন বিভাগ একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এ নীতিমালা শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাজউকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। খসড়ায় মৌজা মূল্য নিয়মিত হালনাগাদ, মৌজার আকার ছোট করা এবং জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনে করহার যৌক্তিকীকরণের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।