জাতীয় বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান, সাবেক অর্থসচিব ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান জানিয়েছেন, নির্ধারিত ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করা হবে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় বেতন কমিশনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ তথ্য দেন। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫’ গঠন করা হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনকে। অর্থ মন্ত্রণালয় গত ২৭ জুলাই প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জাকির আহমেদ খানকে চেয়ারম্যান করে ২৩ সদস্যের এই কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়।
বৈঠকে জাতীয় বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, গত এক দশকে মূল্যস্ফীতি-জিডিপি বাড়লেও সে অনুপাতে বেতন বাড়েনি। একটি সময়োপযোগী বেতন কাঠামো নির্ধারণের পাশাপাশি কমিশন বিশেষায়িত চাকরির জন্য আলাদা বেতন কাঠামো গঠন; আয়কর পরিশোধ বিবেচনায় বেতন কাঠামো; বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াতসহ অন্যান্য ভাতা নিরূপণ; মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতন সমন্বয়ের পদ্ধতি নিরূপণ; সময়োপযোগী পেনশনসহ অবসর–সুবিধা নির্ধারণ; কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মান মূল্যায়নে কাজ করছে।
মূল্যায়ন অনুযায়ী একটি বেতন কাঠামো প্রণয়ন, টেলিফোন, গাড়ি ও মোবাইল ফোন–সংক্রান্ত বিষয়ে আর্থিক সুবিধা নগদ ও রেশন সুবিধা যৌক্তিকীকরণ, বেতনের গ্রেড ও ইনক্রিমেন্টে অসঙ্গতি থাকলে তা দূরীকরণে সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে বলেও জানান তিনি। কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এরই মধ্যে পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। বেতন কাঠামো নির্ধারণে ছয় মাস সময় দেওয়া হলেও এর আগেই আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো বলে আশা করছি।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দেন, বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি যৌক্তিক বেতন কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বিশেষভাবে স্বাস্থ্য বিমার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বেতন বাড়ানো হলেও অনেক সময় একবার অসুস্থ হলেই মানুষের সব সঞ্চয় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ইন্স্যুরেন্স থাকলে পরিবার নিরাপদে থাকে। প্রতিবেশী কিছু দেশেও এ ধরনের মডেল চালু আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এক দশক পর সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাধীন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান।