ছয় বিমা কোম্পানির ৩,৭৩৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ

বিমা কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব গ্রাহকদের প্রিমিয়ামের অর্থ সুরক্ষিত রাখা, কিন্তু ছয়টি প্রতিষ্ঠান সেই দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থ হয়েছে। বরং অভিযোগ উঠেছে, এসব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা বিনিয়োগের নামে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো হলো—ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বাইরা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকদের মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে ৩,৭৩৬ কোটি টাকা।

এই পরিস্থিতিতে আত্মসাৎ করা প্রিমিয়ামের অর্থ পুনরুদ্ধারে একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্সের আদলে ‘ইন্স্যুরেন্স রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্স’ নামের এই আইন প্রণয়ন করা হবে। এ আইনের মাধ্যমে অভিযুক্ত বিমা কোম্পানিগুলোর স্পন্সর পরিচালকদের সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আদায় করা যাবে। পাশাপাশি দেউলিয়া অবস্থায় থাকা কোম্পানিগুলোর মালিকানা পরিবর্তন, অবসায়ন অথবা অন্য কোনো কোম্পানির সঙ্গে একীভূত করার সুযোগ থাকবে।

এছাড়াও, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের জমাকৃত প্রিমিয়ামের পুরোটা বা আংশিক অর্থ ফেরত দিতে সরকার থেকে ভর্তুকি হিসেবে অর্থ বরাদ্দ নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। একই সঙ্গে, এসব বিমা কোম্পানির জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাও করার পরিকল্পনা রয়েছে। আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, যেভাবে ব্যাংক রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে, একইভাবে ‘ইন্স্যুরেন্স রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্স’ চালুর মাধ্যমে বিমা কোম্পানিগুলোর মালিকানাও পরিবর্তন করা হবে। পাশাপাশি, অর্থ আত্মসাৎকারী পরিচালকদের ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি করে আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধারেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ড. আসলাম আলম বলেন, দেউলিয়া হওয়ার পথে থাকা ১০টি ব্যাংককে রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি তহবিল দিয়েছে। কিন্তু সংকটাপন্ন বিমা কোম্পানিগুলোর জন্য আইডিআরএ’র তেমন কোনো তহবিল সহায়তা দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি জানান, ‘ব্যাংক আমানত সুরক্ষা আইন’-এর আদলে বিমা খাতে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ভালো অবস্থানে থাকা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর আপত্তির কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যেন সরকার বাজেটে ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ রাখে, যাতে গ্রাহকদের পাওনা অর্থ ফেরত দেওয়া যায়। তা সম্ভব না হলে অন্তত এমন ব্যবস্থা করা হোক, যাতে এসব কোম্পানির নামে ব্যাংক ঋণের সুযোগ তৈরি হয় এবং সেখান থেকে গ্রাহকদের কিছু অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হয়।

**৪৬ বিমা কোম্পানি গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি দিচ্ছে না
**৫ বিমা কোম্পানির ৫৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!