জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে অপসারণে তিনদিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিলো। যা আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) শেষ হয়েছে। কিন্তু অপসারণ না করায় এবার অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যানকে রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। বৃহস্পতিবার রাতে এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগ থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণে অসহযোগ কর্মসূচি দিয়ে আসছে ঐক্য পরিষদ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এনবিআর বিলু্প্ত করে গত ১২ মে মধ্যরাতে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশ বাতিল ও টেকসই রাজস্ব সংস্কারসহ মোট চার দফা দাবিতে ১৪ মে থেকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আহ্বানে সারা দেশের কাস্টমস, ভ্যাট ও ট্যাক্স বিভাগের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধাপে ধাপে ২৫ মে পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। ২৫ মে রাতে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। রাজস্ব সংস্কারের লক্ষ্যে সরকারের এই ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি এবং সরকারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। কারণ প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করবে না। বরং এটিকে সরকারের একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় আরও শক্তিশালী করবে। রাজস্ব নীতি প্রণয়ণের লক্ষ্যে আলাদা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের পূর্ব পর্যন্ত জারি করা অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না।
আরো বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারির পরপরই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা ২৬ মে থেকে ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির কর্মসূচি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হয়। এর ফলে ওইদিন থেকে সকল দপ্তরে পূর্ণ উদ্যোমে কাজ চলছে।
বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করে বলা হয়, আমাদের দ্বিতীয় দাবি অর্থাৎ অবিলম্বে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিটি এখনও পূরণ হয়নি। আমরা দাবি করেছিলাম আজ ২৯ মে’র মধ্যে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। অর্থাৎ ইতিপূর্বে ঘোষিত এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণের বিষয়ে সরকার চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত প্রদান করেনি। কিন্তু বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে বলে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। সরকারের আন্তরিক হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে আমাদের ন্যায্য দাবিসমূহ আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের যৌক্তিক এই দাবি বাস্তবায়নে প্রতি পদে পদে বাধা সৃষ্টিকারী, প্রসেস টেম্পারিং ও সকলের অগোচরে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মূল কাঠামো ধ্বংসের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী এই চেয়ারম্যানের হাতে প্রকৃত সংস্কার কার্যক্রম হুমকির মুখে বিধায় আমরা আশা করছি সরকার অবিলম্বে এ বিষয়ে চূডান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। অভিযোগ করে আরো বলা হয়, এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার চরম সংকট সৃষ্টি হওয়ায় তাকে অপসারণের দাবির ধারাবাহিকতায় ইতোপূর্বে ঘোষিত লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি যথারীতি অব্যাহত আছে এবং থাকবে। জারি করা অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুতির প্রক্রিয়ার শুরু থেকে প্রতিটি ধাপে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছেন ও চরম অসহযোগিতা করেছেন। এবং সরকারকে ভবিষ্যৎ রাজস্ব কাঠামো নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষার কথা জানানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়।
বলা হয়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সুবিধাভোগী প্রশাসনের এই কর্মকর্তা তার পূর্ববর্তী পদে থাকা অবস্থায় ব্যাংকিং খাতে বিশৃংখলা সৃষ্টিসহ জুলাই পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে কর ফাঁকি বিষয়ে সহযোগিতা করতে এনবিআরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অডিট কার্যক্রম বন্ধ করেন। এছাড়াও নজিরবিহীনভাবে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে অযৌক্তিক এবং অপরিকল্পিতভাবে ভ্যাট হার বৃদ্ধির মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেন। তিনি বিভিন্ন উপায়ে সরকারের সাথে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের গঠনমূলক ও সার্থক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিসমূহের বিষয়ে সরকারকে শুরু থেকেই বিভ্রান্ত করে সরকারের সাথে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দুরত্ব তৈরির অপচেষ্টা করে পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতিকে দীর্ঘায়িত ও জটিল করেছেন। তার অবস্থান অতি নেতিবাচক ও ষড়যন্ত্রমূলক না হলে এই সমস্যা অনেক আগেই সুরাহা হয়ে যেতো।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাভাবিকভাবে উদ্ভুত এই পরিস্থিতিতে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণের পূর্ব পর্যন্ত রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। আমরা আশা করি, রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সরকার কর-রাজস্ব নীতি প্রণয়ন, কর-রাজস্ব আহরণ ও ব্যবস্থাপনায় জ্ঞান, দক্ষতা ও বাস্তব কর্ম-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন কর্মকর্তাকে এনবিআরের চেয়ারম্যান পদে পূর্ণকালীন দায়িত্ব প্রদান করবেন।