চীনে আমদানি রপ্তানি হবে, কেজি প্রতি ৪-৫ ডলার

পদক্ষেপ নিতে এনবিআরকে ইপিবির চিঠি

চীনে আম রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানির প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও সহজ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি চীনের আমদানিকারক ও বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের নিয়ে একটি সভা করে ইপিবি। সেখানে উঠে আসা বিভিন্ন সুপারিশ ও পরামর্শ উল্লেখ করে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ওই সভায় চীনে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে সেই বিষয়ে ইপিবিকে বিস্তারিত জানিয়েছেন চীনের আম আমদানিকারক বাবাইলি গ্রুপের সহকারি মহাব্যবস্থাপক অ্যারন লুও।

এতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য চীন অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও বড় বাজার হতে পারে। তবে বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রপ্তানির সুযোগ কাজের লাগাতে হলে উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদেরকে অবশ্যই কিছু মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে। সেগুলো হলো- চীনের জৈব নিরাপত্তা আইন, খাদ্য নিরাপত্তা আইন, প্রাণীজ ও উদ্ভিদ পৃথকীকরণ ও এতদসংক্রান্ত আইন, ফাইটোস্যানেটারি সনদ এবং জিএসিসির নিবন্ধন সংক্রান্ত বিধিবিধান।

চিঠিতে বলা হয়, আম রপ্তানির ক্ষেত্রে নীতিগত সুবিধা দেওয়া দরকার। আমের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। এক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম হতে পারে চার থেকে পাঁচ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা) হতে পারে ৪৮৮ থেকে ৬১০ টাকা। ঢাকা-চায়না কার্গো ফ্লাইটে আম পরিবহন করা হবে। শুরুর দিকে চীনের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের বিমানে করে আম পরিবহনের কাজ করবে।
Mango China Ambassador
রপ্তানিকারকরা জানান, রাজশাহী বা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফাইটোস্যানিটারি সনদ পেতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যেতে হয়, যা কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। সেজন্য লোকাল প্যাকিং হাউস থেকে এই সনদ সরবরাহের ব্যবস্থা করা দরকার। আম রপ্তানিকারকদের চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস অব চায়নার (জিএসিসি) গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। প্রতিটি মৌসুমের আগে আম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে একটি নিবন্ধিত তালিকা চীনা জিএসিসিকে দিতে হবে। জিএসিসি এ তালিকা পর্যবেক্ষণ ও অনুমোদনের পর নির্বাচিত রপ্তানিকারকদের নিবন্ধন দেওয়া হবে। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম চীনা শুদ্ধ প্রশাসনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

জিএসিসির ঘোষণা অনুযায়ী চীনে আম রপ্তানির জন্য উদ্দিষ্ট বাগান, প্যাকেজিং প্ল্যান্ট, কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা, হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট, প্যাকিং হাউস ব্যবস্থাপনা, কোয়ারেন্টইন ব্যবস্থাপনা, ফাইটোস্যানেটারি সনদ, বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয় বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন থাকতে হবে। আমবাগানের দূষণমুক্ত পরিবেশ, ট্রেসিবিলিটি সিস্টেম প্রতিষ্ঠা, উত্তম কৃষি চর্চা ও সমন্বিত কীটপ্রতঙ্গ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে হবে।

অপরদিকে, চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্টদূত ইয়াও ওয়েন। ২৯ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় একটি আমবাগান পরিদর্শন করেছেন তিনি। ওই সময় তিনি এ তথ্য জানান।

বাংলাদেশ থেকে চীনে আম নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। বাংলাদেশের আম প্রক্রিয়াজাত নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিমানে রপ্তানি খরচ বেশি হওয়ায় জাহাজে আম নেওয়া যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।’

চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশের সুস্বাদু মিষ্টি আম তারা চীনের বাজারে আমদানি করতে চান। তাই বাংলাদেশের নিরাপদ ও সুস্বাদু আমের উৎপাদন কার্যক্রম দেখতে বাগান পরিদর্শনে এসেছেন তিনি। চলতি বছর তারা বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আম চীনের বাজারে আমদানি করতে আগ্রহী।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!