বার্তা প্রতিবেদক: ঢাকার বাজারে এখন মোটা চালের (স্বর্ণা) কেজি ৫৫ টাকায় উঠেছে, যা এক মাস আগের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। বাজারে নজর রাখা ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক কালে এই দর সর্বোচ্চ। বাজারে এখন এক কেজি সরু চাল কেনা যাচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। আর মোটা চাল সর্বনিম্ন ৫৫, সর্বোচ্চ ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের বিকল্প খাদ্য আটার (খোলা) দামও এক মাসে বেড়েছে ২৪ শতাংশ।
আরেক দফা বেড়েছে আটা ও ময়দার দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা আটার দাম ৫ থেকে ৭ টাকা এবং প্যাকেটজাত আটা ৮ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে। খোলা ময়দা ২ থেকে ৫ টাকা আর প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের পেছনে পেছনে ছুটছে আটা।
গম আমদানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে আমদানি খরচ। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সব পর্যায়ে পরিবহন ভাড়ার বাড়তি চাপ পড়েছে। এ ছাড়া লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সপ্তাহে এক দিন কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। এসব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ করে আটা ও ময়দার দাম আরেক দফা সমন্বয় করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।
বাংলাদেশের গম আমদানির প্রধান উৎস রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত এপ্রিল থেকে বিশ্ববাজারে গমের অস্থিরতা শুরু হয়। তখন বাংলাদেশেও গম আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশে দফায় দফায় গমের দাম বাড়তে থাকে। এরপর ভারত রপ্তানি বন্ধ করলে আরও বেসামাল হয়ে ওঠে আটা ও ময়দার বাজার। তবে যুদ্ধের কারণে দীর্ঘদিন ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আসা বন্ধ থাকলেও দেশ দুটি থেকে এখন আমদানির পথ খুলছে। অন্যদিকে, বিশ্ববাজারে গমের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে বাংলাদেশে এর কোনো সুফল নেই। উল্টো দিন দিন বেড়েই চলছে আটা ও ময়দার দাম।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি খোলা আটা ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, প্যাকেটজাত আটা ৬২ থেকে ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগেও খোলা আটা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং প্যাকেটজাত আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর খোলা ময়দার কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হলেও প্যাকেটজাত ময়দার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৩ থেকে ৭৪ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে খোলা ময়দা ৫৮ থেকে ৬০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ময়দা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় কেনা যেত।
অপরদিকে, বিপণনকারী দু-একটি কোম্পানি আটার দুই কেজির প্যাকেটের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে ১২৫ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানির প্রতিনিধিরাও জানিয়ে গেছেন প্যাকেটজাত আটার দাম বাড়তে পারে। এর আগে আটার দুই কেজির প্যাকেটের খুচরা দর ছিল সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা। সেই হিসাবে প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। চলতি মাসের শুরুর দিকে বাজারে আটার দুই কেজির প্যাকেটের দাম ছিল ১০৪ টাকার আশপাশে। সে হিসাবে দাম বাড়ল প্রতি কেজি ১০ টাকার মতো। টিসিবি বলছে, খোলা ময়দার দামও বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ।
টিসিবির দৈনন্দিন বাজার দরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে খোলা আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং প্যাকেটজাত আটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, খোলা ময়দার কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা এবং প্যাকেটজাত ময়দার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুসারে এক মাসের ব্যবধানে খোলা আটার দাম ২৩ শতাংশ ও প্যাকেটজাত আটার দাম ১৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আর খোলা ময়দার দাম ৮ শতাংশ ও প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। তবে এক বছরের ব্যবধানে খাদ্যপণ্য দুটির দাম বাড়ার হার আরও বেশি। এ সময় আটার দাম সর্বোচ্চ ৬৬.৬৭ শতাংশ এবং ময়দার দাম ৫৩.৪১ শতাংশ বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের একজন বিক্রেতা জানিয়েছেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে আটার দাম বাড়তি। খোলা আটার দাম বাড়ার পরে এখন প্যাকেট আটার দামও বাড়ছে। বেচাকেনা কম হওয়ায় বাড়তি দামের মাল দোকানে কম তুলছি।’ দেশে বছরে প্রায় ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা আছে। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ লাখ টন আমদানি করতে হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে দেশের বাজারে আটার দাম বাড়ছে। টিসিবির হিসাবে, এক বছরে আটার দাম বেড়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ।
খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এই অর্থবছরের জুলাই থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বেসরকারিভাবে গম আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার ৯০ টন। বর্তমানে দেশে সরকারি গমের মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার টন।
###