** চার সিটি কর্পোরেশন অবস্থিত আয়কর সার্কেলের অধিক্ষেত্রভুক্ত সকল সরকারি কর্মচারী
** সকল তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনলাইন রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক
** ৪ মোবাইল অপারেটর ও ৬ বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনলাইন রিটার্ন বাধ্যতামূলক
কর অফিসে রিটার্ন দাখিল, প্রাপ্তি স্বীকার ও সনদ নেয়ার ক্ষেত্রে করদাতাদের হয়রানির অভিযোগ উঠে। এই হয়রানি থেকে করদাতাদের স্বস্তি দিতে অনলাইন রিটার্ন বা ই-রিটার্ন পদ্ধতি চালু করেছে এনবিআর। মূলত নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী আয়কর বিভাগকে অটোমেশন বিশেষ করে ‘ইলেট্রনিক কর ব্যবস্থাপনা’ চালুর বিষয়ে ধারা যুক্ত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী করদাতাদের স্বস্তি দিতে সম্প্রতি নতুন উদ্যোমে ই-রিটার্ন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ই-রিটার্ন পদ্ধতি প্রতিনিয়ত করদাতাদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে। আরও জনপ্রিয় করতে চার শ্রেণির করদাতাদের অনলাইন রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এনবিআর মো. আবদুর রহমান খান সই করা ‘স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত বিশেষ আদেশ’ জারি করা হয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, এই আদেশ জারির ফলে করদাতাদের একটি বড় অংশ অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবে। যার মধ্য দিয়ে ই-রিটার্ন আরোও জনপ্রিয় হবে। ভবিষ্যতে আরো কয়েক শ্রেণির করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হবে।
আদেশে বলা হয়েছে, আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩২৮ এর উপধারা (৪) এর ক্ষমতাবলে এনবিআর এই বিশেষ আদেশ দ্বারা চার শ্রেণির স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করছে। চার শ্রেণির মধ্যে রয়েছে—ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে অবস্থিত আয়কর সার্কেলসমূহের অধিক্ষেত্রভুক্ত সকল সরকারী কর্মচারী। দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সকল মোবাইল অপারেটর বা মোবাইল টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া ছয়টি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তা-করচারীর অনলাইন রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো—ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাটা স্যু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি।
সূত্রমতে, দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ—এই চার সিটি করপোরেশন অবস্থিত কর সার্কেলের নিবন্ধিত করদাতা। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশিরভাগ অংশ অনলাইনের আওতায় চলে আসবেন। বর্তমানে দেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার। দেশে বর্তমানে পাঁচটি মোবাইল ফোন অপারেটর রয়েছে। এর মধ্যে সিটিসেল বন্ধ রয়েছে। বাকি গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক ও টেলিটক সচল রয়েছে। এই চারটি অপারেটরে প্রায় ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। আবার ছয়টি বহুজাতিক কোম্পানিতে প্রায় লক্ষাধিকের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছে।
এনবিআরের আয়কর বিভাগের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো করদাতাকে স্বস্তি দেওয়া। করদাতাকে কর অফিসেই আসতে হবে না। ই-রিটার্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে একজন করদাতা সব ধরনের করসেবা পাবেন। প্রাথমিকভাবে আমরা সাধারণ করদাতাদের জন্য ই-রিটার্ন চালু করেছি। প্রতিনিয়ত করদাতাদের সাড়া বাড়ছে। এখন চার শ্রেণির স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার অনলাইনে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই চার শ্রেণির করদাতা দেশের মোট করদাতার প্রায় ৮০ শতাংশ। ভবিষ্যতে সব শ্রেণির করদাতাকে অনলাইন রিটার্ন দাখিলে বাধ্যতামূলক করতে এনবিআর কাজ করছে। শুধু ব্যক্তি করদাতাই নয়, সব প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে বাধ্য করা হবে।
অপরদিকে, এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন জানিয়েছেন, এনবিআর গত কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বিষয়টিকে উৎসাহ দিয়ে আসছে। ২০২৪-২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল ও কর পরিপালন সহজ করতে এনবিআর চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম উন্মুক্ত করে। ইতোমধ্যে এক লাখ করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন। ই-রিটার্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা সহজে নিজের রিটার্ন তৈরি করে অনলাইনে জমা দিতে পারছেন। সেজন্য করদাতার ব্যবহূত মোবাইল নম্বরটি নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বায়োমেট্রিক নিবন্ধিত কি না, তা আগে যাচাই করে নিতে হবে। যাচাই করার জন্য ১৬০০১ নম্বরে ডায়াল করতে হবে।
অন্যদিকে, এই পোর্টাল চালুর সময় এনবিআর জানিয়েছিল, ই-রিটার্ন পদ্ধতিতে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা নিজের রিটার্ন তৈরি, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল অথবা অফলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। সেই সঙ্গে অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে কর পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া রিটার্ন দাখিলের তাৎক্ষণিক প্রমাণপ্রাপ্তি, আয়কর পরিশোধ সনদ ও টিআইএন সনদ, আগের বছর দাখিল করা ই-রিটার্নের কপি, রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ প্রিন্ট বা ডাউনলোডের সুবিধা আছে। ২০২৩-২৪ করবর্ষে মোট পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৭ জন করদাতা ই-রিটার্ন দাখিল করেন।