লোকোমোটিভ সমস্যায় বন্দরে পড়ে আছে ১৫০০ কনটেইনার

আইসিডি কমলাপুর বন্দরে আমদানি করা পণ্যের কনটেইনার জট সৃষ্টি করেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর কারণ হলো লোকোমোটিভ সংকট, ফলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে সময়মতো পণ্য না পৌঁছানোর কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আইসিডি কমলাপুর কাস্টম হাউসও রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন। ব্যবসায়ীদের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ১,৫০০ কনটেইনার আটকা পড়েছে। রমজানকে সামনে রেখে দ্রুত পণ্য খালাস, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং কনটেইনার জট কমানোর জন্য কমলাপুর কাস্টম হাউসের কমিশনার ড. নাহিদা ফরিদী বাংলাদেশ রেলওয়েকে ১০টি লোকোমোটিভ চালু করার জন্য চিঠি দিয়েছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালককে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকার মধ্যবর্তী আইসিডি কমলাপুর বন্দর। সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি কনটেইনার এই বন্দরে আনতে ব্যবসায়ীদের দ্বিগুণ খরচ করতে হয়। তবে, দ্বিগুণ খরচ সত্ত্বেও তারা চট্টগ্রাম থেকে কনটেইনার আনতে পারছেন না। মূলত বাংলাদেশ রেলওয়ের উদাসীনতার কারণে এটি হচ্ছে। আগে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ভর্তি পণ্য আনতে প্রতিদিন চারটি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ব্যবহার করা হতো, কিন্তু বর্তমানে শুধুমাত্র একটি লোকোমোটিভ ব্যবহার করা হচ্ছে।

কমিশনারের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারের সকল উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ও সুস্থভাবে পরিচালনা করতে সঠিক রাজস্ব আদায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন তিনটি অনুবিভাগের মাধ্যমে, যার মধ্যে কাস্টমস অনুবিভাগ অন্যতম। কাস্টমস অনুবিভাগের রাজস্ব আহরণের প্রধান উৎস ছয়টি কাস্টম হাউস, যার মধ্যে একটি হলো আইসিডি। চলতি অর্থবছরের জন্য আইসিডি কাস্টম হাউসের মোট রাজস্ব লক্ষ্য ছিল ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যার ফলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮৬৮ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই রাজস্ব ঘাটতির কারণ বিশ্লেষণ করেছে ডেটা বিশ্লেষণ টিম এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে। পর্যালোচনায় জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে আইসিডি কমলাপুরে প্রায় ১,৫০০ কনটেইনার আটকা পড়েছে, যা বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে বিবেচিত হচ্ছে।

এই কনটেইনার জটের বিষয়ে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, কাস্টম হাউস আইসিডির সক্ষমতা ১০ লাখ টিইইউএস হলেও তা যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না, ফলে রাজস্ব আদায় ও বাণিজ্য সহজীকরণ ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রয়োজনীয় ১০টি লোকোমোটিভ ও সমানুপাতিক ক্যারেজ সরবরাহ করতে পারছে না। বিদ্যমান চারটি লোকোমোটিভের মধ্যে দুটি রাজস্ব সংশ্লেষবিহীন রুটে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, কাঁচামাল ও রপ্তানিকৃত পণ্যের কনটেইনার আটকে যাচ্ছে, যা আমদানিকারকদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিপিং এজেন্টদের মাধ্যমে বিলম্বের জন্য জরিমানার ফি পরিশোধের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ক্ষতি হচ্ছে।

আমদানি-রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত পোশাক কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম থেকে কাস্টম হাউস আইসিডি পর্যন্ত একটি ফ্রেইট করিডোর তৈরির আশা করছিল। তারা আইসিডি বন্দর ব্যবহার করে দ্রুত কাঁচামাল ও পণ্য খালাস করে নিজেদের উৎপাদন দক্ষতা বাড়াতে এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় আরও সক্ষম হতে চেয়েছিল। তবে, কনটেইনার পরিবহনে বিলম্ব এবং চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জটের কারণে তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আমদানি-রপ্তানির সময় ও ব্যয় হ্রাস এবং কাস্টমসের আধুনিকীকরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবাহ ত্বরান্বিত এবং রাজস্ব আহরণের অচল অবস্থা সমাধান করতে রেলওয়েকে ১০টি লোকোমোটিভসহ যথাযথ ক্যারেজ সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছেন কমিশনার।

আইসিডি কমলাপুর কাস্টম হাউসের মাধ্যমে একাধিক আমদানি-রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, ঢাকা এবং আশপাশের ব্যবসায়ীদের জন্য আইসিডি কমলাপুর বন্দর একটি বড় সুবিধা। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে এই বন্দরের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ নেই, যার কারণে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আইসিডিতে কনটেইনার আসছে না। রমজানকে সামনে রেখে আমদানিকারকরা বিপুল পরিমাণ পণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করেছেন, কিন্তু লোকোমোটিভের অভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার আটকে রয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং কাস্টম হাউসও রাজস্ব পাচ্ছে না। বারবার রেলওয়েকে লোকোমোটিভ বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হলেও, অজানা কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে দ্রুত লোকোমোটিভ বৃদ্ধি এবং আইসিডি বন্দরকে আরও ব্যবসাবান্ধব করার পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামকে ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। হোয়াটঅ্যাপ নম্বরে পাঠানো বার্তাটি তারা দেখে নিলেও কোনো উত্তর দেননি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!