চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ৪ কোটি টাকার ৩ লাখ ৫৬ হাজার লিটার জ্বালানি তেল পাচারের সময় কোস্টগার্ড দুটি জাহাজ জব্দ করেছে। এর মধ্যে একটি পানামার পতাকাবাহী বিদেশি জাহাজ এবং অন্যটি দেশীয় জাহাজ ছিল।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, একটি সিন্ডিকেট চোরাপথে সংগৃহীত তেল বিদেশি জাহাজটিতে পাচার করছিল। তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় বিদেশি জাহাজের ট্যাংক ভর্তি করে তেল নিয়ে এসে তা দেশে বিক্রি করে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হাতছাড়া হয়।
এদিকে, পানামার পতাকাবাহী জাহাজটি অনুমতি ছাড়াই বহির্নোঙরে আসায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দরের হারবার মাস্টার বিদেশি জাহাজটির নিয়োগ দেওয়া বাংলাদেশি প্রতিনিধি মেসার্স এইচএসআর ওশেন ট্রেডারকে জরিমানা পরিশোধের নোটিশ দিয়েছেন।
কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার মোহাম্মদ সিয়াম-উল-হক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের কুতুবদিয়া বহির্নোঙরে কোস্ট গার্ডের নিয়মিত টহলদল সন্দেহজনকভাবে দুটি জাহাজকে জ্বালানি তেল আদানপ্রদান করতে দেখতে পায়। একটি ছিল বাংলাদেশি ওয়েল ট্যাংকার ‘ওটি ইউনিয়ন’ এবং অন্যটি পানামার পতাকাবাহী বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ‘এমটি ডলফিন-১৯’। কোস্ট গার্ড টহলদল জাহাজ দুটি এবং তাদের কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, কিন্তু তারা বহির্নোঙরে নোঙর করার বৈধ কাগজপত্র এবং জ্বালানি তেল সংগ্রহ বা প্রদানের অনুমতি দেখাতে ব্যর্থ হয়।
কোস্টগার্ডের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিদেশি জাহাজটির চট্টগ্রাম বন্দরে আসার কোনো ঘোষণা ছিল না। এটি মোংলা বন্দরে যাওয়ার জন্য এসেছিল। কিন্তু জাহাজটি মোংলায় না গিয়ে ওইদিন সকাল ৭টা নাগাদ বন্দরের বহির্নোঙরের কতুবদিয়া এলাকায় অবস্থান নেয়। চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত বিদেশি জাহাজটি অবৈধভাবে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ওয়েল ট্যাংকার থেকে আনুমানিক ৩৫৬ মেট্রিক টন বা প্রায় ৩ লাখ ৫৬ হাজার টন জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। বিদেশি জাহাজটিকে জব্দ করে বহির্নোঙর এলাকায় আনা হয়েছে।
কোস্ট গার্ড সূত্র থেকে জানা যায়, জ্বালানি তেল দাতা বাংলাদেশি অয়েল ট্যাংকারটিও ৯ জন ক্রুসহ কোস্ট গার্ডের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মেরিন কোর্টের মাধ্যমে জাহাজ দুটির আর্থিক জরিমানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
কোস্টগার্ডের জব্দের পর কাস্টমস এবং সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এমটি ইউনিয়ন জাহাজের ৯ নাবিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।নাবিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, কোস্টগার্ডের হাতে জব্দ বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেলের চালানটি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মজুমদারের মালিকানাধীন পোর্টল্যান্ড সার্ভিসেস পাচার করছিল। বিষয়টি ওটি ইউনিয়নের ৯ নাবিক স্বীকার করেছেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, বিদেশি জাহাজ থেকে সস্তায় চোরাপথে জ্বালানি তেল কিনে তা দেশি-বিদেশি জাহাজে বিক্রি করে সরকারকে কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিপিসি ৮৬.২৫% শুল্ক পরিশোধ করে জ্বালানি তেল আমদানি করলেও, চোরাচালানিরা এক টাকা শুল্ক না দিয়েই বাংকারিংয়ের নামে বিপুল পরিমাণ তেল বিক্রি করছে। কোস্টগার্ডের হাতে জব্দ জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৪ কোটি টাকা, যার জন্য সরকারকে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হত।
বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভিটিএমআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাহাজটির বন্দর সীমানায় অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হন।যোগাযোগ করা হলে জাহাজের মাস্টার বন্দর সীমানায় প্রবেশের আগে ঘোষণা না দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।জাহাজটি বন্দরের সীমানায় প্রবেশের একদিন পর মেসার্স এইচএসআর ওশেন ট্রেডারকে এ দেশের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেয়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কোনো জাহাজকে বন্দর সীমানায় প্রবেশের অন্তত ৫ কর্মদিবস আগে ঘোষণা ও অঙ্গীকারনামা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এমটি ডলফিন-১৯ এই নিয়ম লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বন্দরের জলসীমায় প্রবেশ করায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।