চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুরোপুরি কার্গো পরিবহন চালু করতে উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সরকারের এয়ার কার্গো অবকাঠামো শক্তিশালীকরণের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যাতে রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালিত হয়। এ লক্ষ্যে বিমানবন্দরের অব্যবহৃত ২৭০ টন ধারণক্ষমতার একটি কার্গো স্টেশন চালুর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যমান সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত এবং চীনে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুসহ নতুন রপ্তানি রুটের জন্য প্রস্তুতি নেওয়াই এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম-চীন রুটে কার্গো ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর পরিচালকের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। অচিরেই এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে এয়ার কার্গো ফ্যাসিলিটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে ২১ এপ্রিলে এক জরুরি সভায় কাস্টমস, সিএন্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হয়। এতে কার্গো অপারেশনে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করে তিন ধাপে—স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী—পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।সম্প্রতি ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পর সরকার এ বিষয়টিতে নতুন করে ভাবছে সরকার। আগে ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করা হতো। তবে কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের নিজস্ব এয়ার ফ্রেইট সক্ষমতা গড়ে তোলার একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর বলেন, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করার বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য ইতিবাচক। এখন আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে পারবো। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউরোপসহ কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে কার্গো পরিবহন করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবো।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজও এগিয়ে চলেছে। কোল্ডস্টোর নির্মাণ, কার্গো উইং মেশিন কেনা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জার্মানির এয়ারপোর্ট কনসাল্টিং পার্টনার জিএমবিএইচ কর্তৃক চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যানও প্রণয়নাধীন রয়েছে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বর্তমানে শাহ আমানতের যে কার্গো স্টেশনটি রয়েছে, তার মধ্যে ২৫০ টন আমদানি এবং ২০ টন রপ্তানি পণ্যের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ২০২২ সাল থেকে আমদানি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ থাকায় স্টেশনটি অনেকটাই অব্যবহৃত অবস্থায় ছিল। তবে এখন সপ্তাহে বড় সাইজের দুটি কার্গো ফ্লাইট এলেও তা হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম এ স্টেশনটি।তবে অংশীজনেরা আন্তর্জাতিক কার্গো মানদণ্ড মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন।
এমিরেটস ও ইতিহাদের স্থানীয় এজেন্ট ভয়েজার এভিয়েশনের ম্যানেজার মোরশেদুল আলম বলেন, শুধু কার্গো ফ্লাইট চালু করলেই হবে না, রপ্তানি কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে ‘এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস)’ এবং ‘আরএ-থ্রি’ স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করাও জরুরি। এসব সুবিধা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নেই। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ইউরোপে সরাসরি পণ্য পাঠাতে হলে এসব সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্গো বিভাগের পরিচালক শাকিল মেরাজ জানান, আমরা সিলেটে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং শুরু করছি। ২৭ এপ্রিল গ্যালিস্টেয়ার এভিয়েশনের ৬০ টন রপ্তানি পণ্য নিয়ে প্রথম কার্গো ফ্লাইট স্পেনের উদ্দেশে উড়াল দেবে। চট্টগ্রামেও একই ধরনের কার্যক্রমের পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ঘিরে চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, কোরিয়ান ইপিজেড এবং মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রসার ও শিল্প কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এয়ার কার্গোর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। তবে কার্গো ফ্লাইট ও পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় তারা দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার। কার্গো ভিলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের হলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এখান থেকে তৈরি পোশাকের ফিনিশড গুডস পাঠাতে হলে সড়কপথে ঢাকায় নিয়ে যেতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
চট্টগ্রামে উন্নত এয়ার ফ্রেইট সুবিধার দাবি ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। বিমানবন্দরটি চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, কোরিয়ান ইপিজেড এবং মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলোর মাঝখানে অবস্থিত।কারখানার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এয়ার কার্গোর চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। তবে সরাসরি কার্গো ফ্লাইটের অভাবে রপ্তানিকারকদের ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হয়, যার ফলে ব্যয় বেড়ে যায় এবং রপ্তানিতে সময়ও বেশি লাগে।