উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক লাখ টাকার ঘুস দাবির অভিযোগ করলেন অধস্তন এক কর্মকর্তা। বিষয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্তে প্রমাণিত হয়, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘুস দাবি করেননি। উদ্দেশ্যমূলকভাবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুস দাবির অভিযোগ করা হয়েছে। আবার অধস্তন সেই কর্মকর্তা যখন বুঝতে পারলেন, তিনি ভুয়া অভিযোগ করেছেন। যার কারণে তিনি ফেঁসে যাবেন, তখন ঘুস দাবির সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করলেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। অধস্তন কর্মকর্তা হয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুস দাবির ভুয়া অভিযোগ করায় শাস্তি হিসেবে সাময়িক বরখাস্ত হলেন।
এখানে শেষ নয়। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে হয়রানির শাস্তি হিসেবে লঘুদন্ড বা বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হলেন জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এনায়েত হোসেন। আর এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুস নেয়ার ভুয়া অভিযোগ করে সাময়িক বরখাস্ত ও বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত হওয়া কর্মকর্তা হলেন একই বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলাম। মো. রিয়াজুল ইসলামকে লঘুদণ্ড দিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খান সই করা এই আদেশ জারি করা হয়।
আদেশে বলা হয়েছে, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এনায়েত হোসেন। এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার অধস্তন কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলাম এক লাখ টাকা ঘুস দাবি করার অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তর থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, মো. রিয়াজুল ইসলাম তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুস নেয়ার ভুয়া অভিযোগ করেছেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ঘুস দাবির অভিযোগ করা হয়েছে। ঘুস দাবি করার বিষয়টি সঠিক হয়। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানির বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হবে-এমনটি বুঝতে পেরে সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলাম ঘুস দাবি করার অভিযোগটি তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত দিয়ে প্রত্যাহার করে নেন। তবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ দায়ের করায় অধিদপ্তর থেকে সম্প্রতি মো. রিয়াজুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ১২(১) অনুযায়ী তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
আদেশে আরো বলা হয়, মো. রিয়াজুল ইসলামকে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হলে তিনি জবাব দাখিল করেন। আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি ব্যক্তিগত শুনানির প্রার্থনা করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে মো. রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। সেজন্য মো. রিয়াজুল ইসলামকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৪(২) (ঘ) বিধি মোতাবেক ‘বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’ (বর্তমান বেতন গ্রেড হতে তিন ধাপ অবনমিতকরণ)-শীর্ষক লঘুদন্ড অর্থাৎ আদেশ জারির তারিখ হতে তাঁর বেতন জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর ৯ম গ্রেড (বেতন স্কেল ২২০০০-৫৩০৬০) এর ৩৯৫৭০ টাকা নির্ধারণপূর্বক লঘুদন্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী তাঁকে লঘুদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তাঁর সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের আদেশ দেওয়া হয়।