ঘুষ না পাওয়ায় সেচ প্রকল্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় ৩০ বিঘা জমির বোরো ধানের আবাদে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। পানির অভাবে ধানের ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা বিএডিসি কর্মকর্তা ইলিয়াসের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন গালা ইউনিয়নের দত্তদরতা গ্রামের কৃষকরা।
সরেজমিনে জানা যায়, দত্তদরতা গ্রামের মো. আলতাব হোসেনের ছেলে কৃষক এমদাদুল আলী ২০২১ সালে ৫৭তম অধিবেশনে ৩০ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো মৌসুমে সেচ দেওয়ার জন্য বিএডিসি অফিস থেকে গভীর নলকূপের লাইসেন্স পান। সেই অনুযায়ী শাহজাদপুর পল্লী বিদ্যুৎ বিধি মোতাবেক তাকে সংযোগ দেয়। ৬০তম অধিবেশনে
একই ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের শাহ আলমকে বিএডিসি উপ প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস হোসেন বেআইনিভাবে প্রায় ৮০ ফুট দূরত্বে আরেকটি সেচ প্রকল্পের লাইসেন্স প্রদান করেন। এমদাদুল আলী, যিনি ৩০ বিঘা জমির সেচ প্রকল্পের বৈধ লাইসেন্সধারী, এই নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, ২০২৩ সালে বিএডিসি শাহ আলমের লাইসেন্স অবৈধ ঘোষণা করে এবং তার বিদ্যুৎ সংযোগ বাতিলের চিঠি দেয়। তবে, মো. এমদাদুল আলীর সেচ প্রকল্প ও বিদ্যুৎ সংযোগ বৈধ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, বিনা নোটিশে বিএডিসি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম শামিম খান বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এর ফলে, চলতি ইরি মৌসুমে ৩০ বিঘা জমিতে চাষাবাদে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে।
সেচের অধিনে থাকা কৃষক রনজু, শফিকুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, এই সেচের অধিনে জমিতে ধান চাষ করে পরিবারের আহার জোগাতে হয়। এখন হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জমিগুলো শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সেচ বন্ধ হলে না খেয়ে থাকতে হবে।
সেচ প্রকল্পের লাইসেন্সধারী এমদাদুল আলী অভিযোগ করেন, বিএডিসি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস ঘুষ গ্রহণ করে শাহ আলমকে মাত্র ১৬ শতাংশ জমির জন্য ৮০ ফুট দূরত্বে একটি সেচ লাইসেন্স প্রদান করেন, যা পুরোপুরি নিয়মবহির্ভূত। এরপর, এমদাদুল আলী লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তে ওই গভীর নলকূপের লাইসেন্স অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনায় বিএডিসি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস ক্ষুব্ধ হয়ে দুই কৃষককে হুমকি দেন। তিনি তাদের অভিযোগ তুলে নিয়ে এক লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলেন অথবা একত্রিত হতে বলেন। কিন্তু কৃষক এমদাদুল আলী উভয় শর্তে রাজি না হওয়ায় তার সেচ প্রকল্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা শামিম খান জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না, তবে বিএডিসি অফিসের নির্দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। এদিকে, শাহজাদপুর বিএডিসি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি অফিসে উপস্থিত না থাকায় এবং মোবাইল ফোনে কল রিসিভ না করার কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।