ঘুষ না পেয়ে মামলা, কাস্টমস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ

কারখানা বন্ধ, শ্রমিকদের বিক্ষোভ

চুয়াডাঙ্গায় একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ কোটি ২৮ লাখ টাকা মূসক (ভ্যাট) ফাঁকি উদ্‌ঘাটনের দাবি করেছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এ অভিযোগে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে মেসার্স বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা হয়েছে। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, কাস্টমস কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। না পেয়ে ওই কারখানার মালিক সেলিম আহমেদকে লাঞ্ছিত করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন থেকে এই অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় মালিক তার কারখানাটি বন্ধ করে দিয়েছেন। ৬ জানুয়ারি (সোমবার) কারখানাটি পরিদর্শন করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
472621394 2709978859181344 2043480423761700917 n
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এই সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক –কর্মচারীদের প্রতিনিধি আমিনুর ইসলাম ও টিপু সুলতান। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনসহ ১২ সদস্যের একটি প্রিভেনটিভ দল ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠানে আসেন। তল্লাশির নামে তারা ডাকাতের মতো আচরণ করেন এবং সেলিম আহমেদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দাবি করেন। একপর্যায়ে অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান সেলিম আহমেদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং তাকে (সেলিম আহমেদ) জোরপূর্বক অফিস কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে মূল্যবান কাগজপত্র তছনছ করেন। এ কারণে মালিকপক্ষ প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
472878069 2709979115847985 8235472417974133256 n
অপরদিকে, যশোর ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান ও তার সহযোগী সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনের শাস্তি, প্রতিষ্ঠানের মালিককে হয়রানি বন্ধ এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তারা আন্দোলনে নেমেছে। সংবাদ সম্মেলনের পর তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছেন।
472715847 2709978945848002 8319575268558853815 n

তবে মেসার্স বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকের কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি ও তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেন অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিন গিয়ে আর্থিক অনিয়ম পাওয়া যায়, যা নিয়ে বৃহস্পতিবার ভ্যাট আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। সেখানে বাগ্‌বিতণ্ডা বা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Bango PVC Pipe
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি এবং প্রতিষ্ঠানের মালিককে হয়রানি বন্ধসহ বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজ চালুর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ কঠোর আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেন।

এ বিষয়ে মেসার্স বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান অফিসে ঢুকে প্রথমে বলেন যে অনেক তো লাভ করছেন। এরপর সরাসরি তিনি আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন এবং নিজেই জানিয়ে দেন যে ৩০ লাখের নিচে হবে না। এ ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি গালাগালি করে আমার শার্টের কলার টেনে ধরেন এবং আমাকে আমার অফিসকক্ষ থেকে বের করে দেন। তাই আমি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নিজের টাকা দিয়ে ব্যবসা করে হয়রানির শিকার হওয়ার দরকার নেই। এ কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি।

43146494 1103473669803486 4443263132227338240 n
যশোর ভ্যাট কমিশনারেট বঙ্গ পিভিসি থেকে জব্দ করা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বলছে, বঙ্গ পিভিসি ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত দাখিলপত্রে মোট বিক্রয়মূল্য দেখিয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৪ টাকা। আর অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানের জব্দ করা বিক্রয় তথ্য অনুযায়ী, বিক্রয়মূল্য ৪৪ কোটি ৭৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮৩ টাকা উল্লেখ থাকলেও মাসভিত্তিক বিক্রয়মূল্যের যোগফল পাওয়া যায় ৪৩ কোটি ৩৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮৩ টাকা, যা প্রতিষ্ঠানের ওই সময়ের প্রকৃত বিক্রয়মূল্য। বিক্রয়মূল্যকে ভিত্তি ধরে পরে হিসাব করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত সময়ে দাখিলপত্রে প্রদর্শিত বিক্রয়মূল্য ২ কোটি ৯০ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৪ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি ৪০ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ১০৯ টাকা বিক্রয়মূল্য কম প্রদর্শন করেছে; যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয়মূল্য ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার ৫৩০ টাকা। যার উপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৫ কোটি ২৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৭৯ টাকা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!