আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস আজ শনিবার (৩০ আগস্ট)। ক্যালেন্ডারে দিনটি হয়তো একটি তারিখ মাত্র, কিন্তু শত শত নিখোঁজ মানুষের পরিবারের কাছে এটি এক যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতির দিন। কারও বাবা, কারও ভাই, কারও সন্তান কেউ আর ফেরেনি ঘরে। তাই প্রতি বছর ৩০ আগস্ট এলে নতুন করে নাড়া খায় অপেক্ষার প্রহর।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে গুমের শিকার ৩৫২ জন এখনো ফেরেননি। নিখোঁজের এ পরিসংখ্যান গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র। তারা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন তাও জানেন না স্বজনরা। তারা আজও পথ চেয়ে বসে আছেন-হয়তো একদিন ফিরে আসবে প্রিয় মানুষটি। অন্তর্বর্তী সরকার গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধানে গঠন করেছে ‘গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি।’ কিন্তু তারা এখনো নিখোঁজদের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
প্রতিবছর দিবসটি উপলক্ষ্যে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজন ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানায়। দিবসটি উপলক্ষ্যে ‘মায়ের ডাক’সহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মায়ের ডাকের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ আমলে গুম ছিলেন ৭০৫ জন। ৫ আগস্টের পর অনেকেই আয়নাঘর থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
গুম কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১৮৫০টি অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে। সেগুলো বিশ্লেষণের কাজ চলমান আছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে ৩৩০ জন এখনো গুম রয়েছেন, যাদের ২১১ জনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে গুমের শিকার। আর যারা ফিরেছেন তাদের ২৫৩ জনের বিষয়ে একটি রিপোর্ট সরকারের কাছে দিয়েছে কমিশন।
গুমদের বিষয়ে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি গুম কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পরে সংবাদ সম্মেলন করে সব বলব।
মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আগে আমরা গুম থাকা ৭০৫ জনের তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। তাদের মধ্যে এখনো সাড়ে তিনশর বেশি ফেরত আসেনি। তারা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন তা স্বজনরা এখনো জানেন না। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি গুম কমিশনে ১৮৫০ জন গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি। অনেক মানুষ গুমের শিকার হলেও ভয়ে সামনে আসতে চাচ্ছেন না।
সানজিদা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত বছরের আগস্টে গুম কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশন যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেখানে নিখোঁজদের আইডেন্টিফাই করার কোনো তথ্যই নেই। কিন্তু আমাদের সবার আকাঙ্ক্ষা ছিল কমিশনের মাধ্যমে নিখোঁজদের সন্ধান মিলবে। একটা ট্রাইব্যুনালও গঠন করা হয়েছে। তাহলে কেন এখন পর্যন্ত আমাদের সামনে আসেনি নিখোঁজ মানুষটার সঙ্গে কী করা হয়েছিল, কে করেছিল। তাহলে আমরা তো সেই ১২ বছর আগের জায়গাতেই রয়ে গেছি।