জাহাঙ্গীরের দুর্নীতির ৭৮০০ কোটি টাকার তদন্ত থেমে

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, ভুয়া ভাউচার তৈরি, একাধিক প্রকল্পে একই কাজ দেখানো, জমি অধিগ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর ২০২১ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং ২০২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলেও, কোনো তদন্তই আলোর মুখ দেখেনি।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি গোপনে ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগ ও দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ তাঁকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করে, তবে পরবর্তীতে তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।

দুর্নীতি ৭ হাজার কোটি

২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জাহাঙ্গীরের ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানায়। এসব অভিযোগের বিষয়ে দুদক একাধিক অনুসন্ধান দল গঠন করে। প্রথম অনুসন্ধানী দলে ছিলেন দুদকের উপপরিচালক আলী আকবর ও সদস্য দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান আশিক।গাজীপুরে গিয়ে আশিকুর রহমান আশিক তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তাঁর প্রায় তিন বছরের বেশি সময়কালে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকার অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক।

এরপর আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীর আলমকে দলে ফিরিয়ে নেয়, কিন্তু এর পরেই সব তদন্ত এবং কার্যক্রম থেমে যায়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গুঞ্জন রয়েছে যে, জাহাঙ্গীর আলম ভারতে চলে গেছেন। এসব বিষয়ে জানতে হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমার বিরুদ্ধে নানা সময়ে অনেক মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমি নির্বাচিত মেয়র ছিলাম, কিন্তু আমাকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। ব্যাংকে একক স্বাক্ষরের যে অ্যাকাউন্ট, সেটি আমি খুলিনি।”

মন্ত্রণালয়ের তদন্তও বন্ধ

২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর, দুদকের তদন্তের আগে, ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, একাধিক প্রকল্পে একই কাজ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটি তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগ তদন্তে। কমিটি সরেজমিনে গাজীপুরে বিভিন্ন কাজ পরিদর্শন করে, নগর ভবন থেকে কাগজপত্র ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে এবং কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। তবে তদন্তের ফলাফল এখনও জানা যায়নি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন অনুবিভাগ) এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, “আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। এ ধরনের কোনো বিষয় কেউ আমাকে জানায়নি।”

এ বিষয়ে গাজীপুর নাগরিক ফোরামের সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেছেন, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে গঠিত দুটি তদন্ত কমিটির কাজ শেষ হওয়া উচিত ছিল। তদন্ত শেষ করার জন্য আদালতে রিট করা হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত দুদককে ৬ মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্ত সম্পন্ন হয়নি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!