নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চরআলগী খালে নির্মিত বাঁধ রক্ষায় লাঠি হাতে পাহারা বসিয়েছেন হাজারো নারী-পুরুষ। তারা মনে করছেন, এই বাঁধ ভেঙে দিলে প্লাবিত হবে তাদের ঘরবাড়ি ও জমি। অন্যদিকে, কবিরহাট ও সদর পূর্বাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষদের রক্ষায় বাঁধ কেটে পানি চলাচলের পথ খুলে দেওয়ার দাবিতে ছাত্র-জনতা মানববন্ধন করেছে। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বৃহস্পতিবার বিকেলে ধানশালিক ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রিকশাওয়ালার দোকান এলাকা ও সদরের সোনাপুর জিরোপয়েন্টে সরেজমিনে গিয়ে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির চিত্র দেখা যায়।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের নভেম্বরে একনেক সভায় নোয়াখালী জেলার জলাবদ্ধতা নিরসন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ৩২৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় জেলার ২৩টি খাল, তার মধ্যে নোয়াখালী খালও রয়েছে, পুনঃখননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। এতে ১৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি ১৮২ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, বামনি নদীতে ড্রেজিং, স্লুইস গেট, ক্লোজার ও রেগুলেটর নির্মাণ এবং ১০ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সাবেক সরকারের সময় ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই কাদের মির্জা, শাহাদাত হোসেন ও ভাগিনা ফখরুল ইসলাম রাহাত নিজেদের অবৈধ প্রজেক্ট রক্ষায় অপরিকল্পিতভাবে চরআলগী খাল খনন করেন। এতে নোয়াখালী খালের মুখে পানি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। খননের ফলে বেশ কয়েকটি সেতু ধসে পড়ে, যার ফলে এলাকার মানুষের চলাচলে ভোগান্তি তৈরি হয়। পাশাপাশি, ব্যাপক নদীভাঙনের মুখে পড়ে আশপাশের জনপদ।
ধানশালিক ইউনিয়নের ব্যবসায়ী ইয়াছিন আরাফাত বলেন, চরআলগী খাল খননের পর ব্যাপক ভাঙন দেখা দিলে প্রশাসন রিকশাওয়ালার দোকান এলাকার খালের মাঝখানে একটি আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে ভাঙন রোধ করে। কিন্তু বর্তমানে প্রভাবশালীরা বন্যার পানি নিষ্কাশনের কথা বলে সেই বাঁধ কাটতে চাইছেন, যা প্রতিরোধে এলাকাবাসী প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে। তিনি জানান, গ্রামবাসী লাঠি হাতে দিনরাত পাহারা দিচ্ছে। তারা নিজেরাই পানি নিষ্কাশনের জন্য কয়েকটি স্থানে চলাচলের রাস্তা কেটে দিয়েছে।
স্থানীয় মাদরাসা শিক্ষক মো. আলমগীর খান বলেন, জীবন দেব, রক্ত দেব, তবুও খালের বাঁধ কাটতে দেব না। আমরা পাঁচটি জায়গায় পাকা রাস্তা কেটেছি পানি বের করার জন্য। প্রয়োজনে আরও কাটব, কিন্তু বাঁধ কাটার অনুমতি দেব না।
চরআলগী খালের বাঁধ কেটে নোয়াখালীর পানিবন্দি মানুষকে রক্ষার দাবি ও বুধবারের হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে সদরের সোনাপুর জিরো পয়েন্টে মানববন্ধনের আয়োজন করে ছাত্র-জনতা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থী মো. ইব্রাহীম, এইচ এম রাসেল, শামছুল হক সৌরভ এবং শিক্ষক হাবিবুর রহমানসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, চরআলগী খালের বাঁধ না কাটলে নোয়াখালীর পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। পাশাপাশি, ধানশালিক বাজারে ছাত্র-জনতার ওপর যারা অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। তা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
নোয়াখালী খাল দখলের অভিযোগে অভিযুক্ত অনেকেই এখন পলাতক রয়েছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি কেউ। তবে এ বিষয়ে ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী বলেন, নোয়াখালী খালে আমার এক ফুট জায়গাও নেই। আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, বুধবার চরআলগী খালের বাঁধ কাটার উদ্দেশ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি দল কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে যান। তবে গ্রামবাসীরা তাদের প্রবেশে বাধা দেয়। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।