ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ ও এলসি সুবিধা দিয়েছেন

পূবালী ব্যাংকের মোহাম্মদ আলী

ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে লোন প্রদান ও এলসি সুবিধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে। পূবালী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার শফি আহমদ চৌধুরী এই নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবরও আরেকটি চিঠি দিয়েছেন তিনি। শফি আহমদ চৌধুরী ব্যাংকটির প্রায় ১১ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

দুদকে জমা দেয়া অভিযোগে তিনি উল্লেক করেছেন, পূবালী ব্যাংকের মালিকদের একজন জনাব আবুল কালাম আজাদ (একে আজাদ) প্রত্যক্ষ মদতে ও দুর্নীতির মাধ্যমে ফরিদপুর ভিত্তিক বিতর্কিত ব্যবসায়ী করিম গ্রুপকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যামে তারা ১৮৪৩। কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে। যার মধ্যে ফাতেড ফ্যাসিলিটি ৬০৯ কোটি, নন ফান্টেড ফ্যাসিলিটি ১২৩৪ কোটি টাকা। বর্তমানে ফোর্স লোন ১১০ কোটি টাকা সহ ব্যাংকের পাওনা ৫৮৬ কোটি ও সর্বমোট প্রায় ৯০০ কোটি টাকা যা আদৌ আদায়যোগ্য নহে। এসব ঋণের বেশিরভাগ বিতরণ করা হয় ঢাকা স্টেডিয়াম শাখা থেকে। এই করিম গ্রুপকে ঋণ বিচরণে অভিউৎসারী ও অগ্রনী ভূমিকা রাখেন একে আজাদ। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জামানতও রাখা হয়নি। ইতোমধ্যে ঋণটি শ্রেণীভূক্ত বা ক্লাসিফাইড হয়ে গেছে। করিম গ্রুপকে ব্যাংকের শতশত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দিয়েছে মোহাম্মদ। তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানপূর্বক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।

অভিযোগে তিনি বলেন, পূবালী ব্যাংকের বাজার রোড শাখা, বরিশাল এর গ্রাহক মোহাম্মাদি ইলেকট্রিক ওয়্যার এন্ড মাল্টি প্রোডাক্টস এর এলসি নং ০০০০০২২৬২০০১১৫০৫, ভ্যালু ২,২২,৮৫৪.০০ মার্কিন ডলার এর সেটেলমেন্ট তারিখ ১৪/০১/২০২৪ এ হিসাব নম্বর ২৪৫৪৯০১২০৭৭১ থেকে দুই বারে টাকা কর্তন করা হয়। সিটিপিসি ডলার প্রতি ১১৩ দশমিক ৫০ টাকা হিসেবে ২,৫২,৮৩,৯২৯ টাকা কর্তন করা হয়। বাজার রোড শাখা, বরিশাল কর্তৃক মোহাম্মাদি ইলেকট্রিক ওয়্যার এন্ড মাল্টি প্রোডাক্টস হিসাব নম্বর ২৪৫৪৯০১২০৭৭১ থেকে ডলার প্রতি ৬.৫ টাকা হারে অতিরিক্ত ১৪,৪৮,৫৫১.০০ টাকা কর্তন করে মতিঝিল কর্পোরেট শাখার গ্রাহক রিফাত গার্মেন্টস লি. এর হিসাব নম্বর- ০৩৪০৬০১০৮৩৭৬০ এ জমা করা হয়।অভিযোগ অনুযায়ী, সিলেট শাখার গ্রাহক মেসার্স হাসান ব্রাদার্সের এলসি নং- ০২০৮২৪০১০০২২, ০২০৮২৪০১০০০২, ০২০৮২৪০১০০১৪ এবং ০২০৮২৩০১০৭৬৮ সেটেলমেন্ট করা হয়। এলসি ৪টির মোট ভ্যালু ১১০,৮৪২ মার্কিন ডলার সেটেলমেন্ট হলেও ২৫/০২/২০২৪ তারিখে মেসার্স হাসান এন্ড ব্রাদার্স এর হিসাব নাম্বার ০৪৯৬৯০১০৭০৪৬৫ হতে ৮,৮০, ১৯১ টাকা কর্তন করা হয় অর্থাৎ প্রতি ডলার ৭.৯৪ টাকা অতিরিক্ত কর্তন করত জবতা এধৎসবহ্যং এফ, এর চলতি হিসাব নম্বর-০৩৪০৯০১০৯৩৭৬০ এ জমা করা হয়।

অভিযোগে শফি আহমদ লিখেন, মতিঝিল কর্পোরেট শাখার গ্রাহক রিফাত গার্মেন্টস লি. (হিসাব নম্বর-০৩৪০৯০১০৯৩৭৬০) এর হিসাবে কয়েকশ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ক্রিয়েটিভ ফ্যাশনেও একই ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির প্রেক্ষিতে পূবালী ব্যাংক যে রিপোর্ট দিয়েছে। সেটির পত্র নং ১৪৫, তারিখ ৯-৪-২০২৫। পত্রটি ইন্টারন্যাশনাল ডিডিশন এবং ট্রেজারি ডিভিশন হতে প্রেরিত। এতে বলা হয়েছে ভবিষ্যতে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকর এবারের বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে বলা হয়েছে। এছাড়া আমিরানেট লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক এ পুন:তফসিল হিসাব দুইবার ডেকলাইন করার পরেও এমডির সহায়তায় ৯০৫.০০ কোটি টাকা লোন দেওয়া যায়েছে এবং এখনো পার্টির লেনদেনের অবস্থা ভালো না তারপরেও তাদেরকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যা ক্ষমতার অপব্যবহারের শামিল বলে আমরা মনে করি।

অভিযোগে রয়েছে, বন্দর স্টিলের মালিক পক্ষের ভিতর অনেক আগে থেকেই আমেলা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা লোন দেওয়া হয়েছে বিশেষ সুপারিশে। বর্তমানে আনক্লাসিফাইড দেখালেও প্রকৃতপক্ষে কোম্পানিটির উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ। তাছাড়া হক বিস্কুট ফেক্টরি, তামিম এগ্রো লিঃ, রানু এগ্রো, জহর এগ্রোসহ বহু শিল্প প্রতিষ্ঠানে পরস্পর যোগসাজসে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদান করেছে, যার সিংহভাগ ঝকিপূর্ণ। এই ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল রাজধানীর বংশাল শাখা থেকে। এছাড়া, পূবালী ব্যাংক রাজশাহী মেইৎ শাখার মাধ্যমে বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের দোসর নাবিল গ্রুপকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা এলসি লিমিট প্রদান করে যার সম্পূর্ণ ক্লাসিফাইড হিসাবে ব্যাংকের মোটা অংকের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ডাচবাংলা ব্যাংক এর মালিক সাহাবুদ্দিনের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মতিঝিল ব্রাক থেকে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করা হইয়াছে যার পুরোটাই ক্লাসিফাইড। প্রতিষ্ঠানের নাম এম.এস.এ স্পিনিং এর অনুকূলে (প্রাইম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান) প্রদান করা ঋণের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন। করছি। প্রসবত সাহাবুদ্দীন পূবালী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎপূর্বক বর্তমানে বিদেশে আত্মগোপনে আছেন।

চিঠির শেষে তিনি বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দুর্নীতিবাজ ও অর্থআত্মসাৎকারী দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে কথা বললে শফি আহমদ চৌধুরী বলেন, আমার দেয়া অভিযোগ শতভাগ সত্য। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। আমি ছিলাম পূবালী ব্যাংকের সবচেয়ে বড় শেয়ারধারী। এখন অন্যজনকে বেশি শেয়ার দিয়ে আমাকে দ্বিতীয় নম্বরে আনা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে পূবালী ব্যাংকের মোহাম্মদ আলীর নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বক্তব্যের বিষয় উল্লেখ করে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলেও কোনো উত্তর দেননি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!