মাত্র এক যুগ আগেও কাউকে টাকা পাঠানো বা কোনো পরিষেবার বিল পরিশোধের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর বিকল্প ছিল না। তখন হয়তো অনেকেই ভাবেননি, ঘরে বসেই সুবিধাজনক সময়ে মোবাইল ফোন থেকে দরকারি আর্থিক সেবা গ্রহণ করা যাবে। ব্যাংকে টাকা জমানো বা ব্যাংক থেকে তাৎক্ষণিক ছোট অঙ্কের ঋণ নেয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের ডিজিটাল আর্থিক সেবা এখন নেয়া যাচ্ছে ঘরে বসেই। আর আর্থিক সেবাগুলোকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করে আসছে বিকাশ-এর মতো মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস)।
এমএফএস-এর কল্যাণে ছোট আর্থিক লেনদেন ও সেবা নিতে ভোগান্তি এখন অনেকটাই ইতিহাস। আর্থিক সেবা চলে এসেছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের হাতের মুঠোয়। একই সাথে প্রযুক্তি ব্যবহারে নাগরিকদের অভ্যাসগত পরিবর্তন আসায় ডিজিটাল লেনদেনে তাদের নির্ভরতা বাড়ছে। শুধু টাকা পাঠানো, বিল পরিশোধ, ও মোবাইল রিচার্জের যুগ পেরিয়ে পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সেবার প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে বিকাশ। বিকাশ-এর বিভিন্ন উদ্ভাবনী সেবার মধ্যে রয়েছে – ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয়, রেমিটেন্স, সরকারি ফি প্রদান, ন্যানো লোন, পে-লেটার, ভিসা কার্ড থেকে সরাসরি পেমেন্ট, এনজিও-এর কিস্তি দেয়া, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম দেওয়াসহ অসংখ্য সেবা।
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে মোবাইল আর্থিক সেবা সহজলভ্য করতে ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি এজেন্ট নিয়ে বিকাশ তৈরি করেছে সবচেয়ে শক্তিশালী এজেন্ট নেটওয়ার্ক। এমএফএস সেবা দিয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই এজেন্টরা নিজ নিজ এলাকায় নির্ভরযোগ্য আর্থিক সেবাদাতা হয়ে উঠেছেন। ‘হিউম্যান এটিএম’-খ্যাত এই এজেন্টরা কেবল গ্রাহকদের ভালো সেবা দেয়াই নয়, এই ব্যবসার মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের আর্থিক উন্নয়নেও সফল হয়েছেন। পাশাপাশি, বিকাশ-এর প্রায় ৮ কোটি গ্রাহকের প্রতিদিনের ডিজিটাল লেনদেন সঙ্গী হয়ে ওঠার পেছনে অবদান ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সময়োপযোগী দিক-নির্দেশনা, সব ধরনের ফোনে বিকাশ ব্যবহার করতে পারা, সেবার মান, ধারাবাহিক বিনিয়োগ এবং নিয়মিত উদ্ভাবন।
বরগুনা সদরে বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আলী হোসেন অন্তত একদশক ধরে বিকাশ ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, “আগে ছেলেকে টাকা পাঠানোর জন্য ব্যাংকে বা ডাক অফিসে গিয়ে লাইন দিতে হতো। পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের বিল দিতেও আলাদা আলাদা লাইনে দাঁড়াতে হতো। মাসে একাধিকবার মোবাইল রিচার্জ করতে রিচার্জ পয়েন্টে যেতে হতো। জটিল কাজ থাকলে অনেক সময় কর্মস্থল থেকে ছুটিও নিতে হতো। তবে স্বস্তির বিষয় এখন আর সেই দিন নেই। বিকাশ অ্যাপ দিয়েই ব্যাংক বা কার্ড থেকে সরাসরি টাকা নিয়ে আসি। তারপর ঘরে বসেই দিয়ে দিই সব বিল। সন্তানরা বড়ো হয়ে গেছে, তাই এখন মাঝে মাঝে নাতি-নাতনিদের বিকাশ-এ টাকা পাঠাই। বিকাশ-এর মাধ্যমে এক স্থান থেকেই প্রয়োজনীয় সব লেনদেন করতে পারায় জীবনটা আসলেই অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।”
উল্লেখ্য, বিকাশ গ্রাহকদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি নারী, যা তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত আফসানা করিম বলেন, “বিকাশ দৈনন্দিন সব লেনদেন এতো সহজ করে দিয়েছে যে, আমি এখন সময় বাঁচিয়ে নিজের মতো করে অন্য কাজেও সময় দিতে পারছি। আগে যেসব ছোটখাটো অনেক কাজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হতো, এখন সেই কাজ করা যায় মুহূর্তেই।”
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে ২০১১ সালের ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত এমএফএস হিসেবে বিকাশ যাত্রা শুরু করে। এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর। নিরাপদে ও কম সময়ে নতুন নতুন ডিজিটাল আর্থিক সেবা দিয়ে এক যুগে মানুষের দৈনন্দিন লেনদেনে স্বাধীনতা ও সক্ষমতা এনে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা এবং সীমিত ব্যাংকিং সুবিধায় থাকা জনগোষ্ঠীকে গত ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নিয়ে এসেছে বিকাশ। প্রত্যন্ত গ্রাম হোক বা গ্রাম্য বাজার কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র; বিকাশের মাধ্যমেই মূলধারার অর্থনৈতিক সেবায় যুক্ত হয়েছেন বহু গ্রাহক। বিকাশের নেটওয়ার্কে বর্তমানে যুক্ত রয়েছে ৪৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ফলে বিকাশ থেকে ব্যাংক বা ব্যাংক থেকে বিকাশ-এ লেনদেনের সুযোগ গ্রাহকের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা আমূল বদলে দিয়েছে। ছোট্ট অঙ্কের বিল কিন্তু পরিশোধে বড় ভোগান্তি। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ সব ধরনের বিল পরিশোধ সাধারণের জন্য একদম সহজ করেছে বিকাশ। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি সেবার ফি দেয়াও এখন সহজ বিকাশ-এর কারণে। ২০১৭ সাল থেকে বিকাশ-এর মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে শিক্ষা উপবৃত্তি, করোনাকালীন সরকারি আর্থিক সহায়তা, সামাজিক সুরক্ষা ভাতাসহ বিভিন্ন সহায়তা।
বিকাশ এখন শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ না, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা সরাসরি তাদের প্রিয়জনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে রেমিটেন্স পাঠাতে পারছেন। শতাধিক মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান হয়ে দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে নিষ্পত্তির মাধ্যমে বিকাশ অ্যাকাউন্টে আসছে এই রেমিট্যান্স। সর্বোপরি, বিকাশ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইউটিলিটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, টেলিকম অপারেটর, সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও সহ নানা ধরনের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে দেশে একটি ডিজিটাল লেনদেনের ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নততর প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে বৃহত্তর গ্রাহকগোষ্ঠীকে তাদের দৈনন্দিন লেনদেনে আরো সক্ষমতা ও স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।