দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত (ই-টিআইএনধারী) করদাতার সংখ্যা এক কোটি ১৫ লাখ। যার মধ্যে ২০২৪-২৫ করবর্ষে রিটার্ন দাখিল করেছে প্রায় ৪৪ লাখ। বাকি প্রায় ৭২ লাখ নিবন্ধিত করদাতা রিটার্ন দাখিল করেনি। আবার রিটার্ন দাখিলকারী প্রায় ৪৪ লাখ করদাতার মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল করলেও কর পরিশোধ করেনি (শূন্য রিটার্ন)। ই-টিআইএন নিয়েছেন এমন প্রায় ৭২ লাখ এবং শূন্য রিটার্ন দাখিলকারী প্রায় ৩০ লাখসহ প্রায় এক কোটির বেশি করদাতা থেকে সামর্থ অনুযায়ী আয়কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। সোমবার (১৪ জুলাই) আগারগাঁও এনবিআর আয়কর বিভাগের মাসিক (জুলাই মাস) রাজস্ব পর্যালোচনা সভায় কর কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই নির্দেশ দেন। সভায় আয়কর বিভাগের সদস্য, ঢাকাস্থ কর কমিশনার, মহাপরিচালক, প্রথম ও দ্বিতীয় সচিবরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ঢাকার বাইরের আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা জুম প্লাটফর্মের মাধ্যমে যুক্ত হন।
চেয়ারম্যান বলেন, আয়কর আদায় বাড়াতে হলে ই-টিআইএন থাকা স্বত্ত্বেও যারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না-এমন প্রায় ৭২ লাখ করদাতাকে রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত এবং কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। একইভাবে রিটার্ন দাখিল করলেও যেসকল করদাতা আয়কর পরিশোধ করছেন না-এমন প্রায় ৩০ লাখ করদাতা থেকেও সামর্থ্য অনুযায়ী আয়কর আদায় করতে হবে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭২ লাখ ও ৩০ লাখসহ মোট এক কোটি করদাতা থেকে আয়কর কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কর রিটার্ন দাখিল ও কর আদায় নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া জরিপ এবং স্পট এসেসমেন্ট কার্যক্রম জোরদার করে নতুন করদাতা খুঁজে বের করার জন্য চেয়ারম্যান কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন (ই-রিটার্ন) দাখিল করেছেন। এছাড়া ই-রিটার্নের জন্য নিবন্ধন করেছেন ২১ লাখ ৬৫ হাজার ৩২১ জন করদাতা। ১ জুলাই এনবিআর থেকে জানানো হয়েছে, এই অর্থবছরে ১৭ লাখ ১২ হাজার ৪৯২ জন করদাতা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ই-রিটার্ন দাখিল করেন পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৭ জন করদাতা। তবে চেয়ারম্যান সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সভায় বলেছেন, অনলাইনে ১৫ লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন, যার মধ্যে প্রায় ১০ লাখ করদাতা শূন্য রিটার্ন দাখিল করেছেন। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রতি ১০০ জনে ৭০ জন-ই জিরো ট্যাক্স দেয়, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। যে ৭০ ভাগ শূন্য কর দেখাচ্ছে-তাদের হিসাব খতিয়ে দেখা উচিত।
ই-টিআইএন থাকা সত্ত্বেও যারা রিটার্ন দাখিল করেননি (নন-ফাইলার), তাদের রিটার্ন দাখিলে উদ্ধুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, যারা রিটার্ন দাখিল করেন না, তাদের নিয়ে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করতে হবে।
চেয়ারম্যান এনবিআরের নির্দেশনা অনুসারে আয়কর নথি সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলে ট্রান্সফারে আরো তৎপর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন। তিনি করদাতাদের হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিতে চলতি মাসের মধ্যে-ই সকল নথি ট্রান্সফার সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন। যেকোন মূল্যে অডিট সিলেকশনে সর্বোচ্চ স্বচ্চতা নিশ্চিতের অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করে মো. আবদুর রহমান খান বলেন, অডিট সিলেকশন হতে হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে, যেখানে মনুষ্য কোনো প্রভাব কাজ করবে না। অডিটের উদ্দেশ্য কর আদায় বাড়ানো নয়, বরং কর ফাঁকি রোধ করে কর সংস্কৃতির উন্নয়ন মূল লক্ষ্য।
** ১৫ লাখ ই-রিটার্নের ১০ লাখের করযোগ্য আয় নেই
** ‘প্রতি ১০০ জনের ৭০ জন-ই কর দেয়নি’
** অনলাইনে আয়কর রিটার্ন ১৭ লাখ ছাড়াল
** এক কোটি টিআইএনধারী রিটার্ন দেন না: এনবিআর
** অনলাইনে ১৪ লাখ রিটার্ন, কর আদায় ১৫৮ কোটি