কোটামুক্ত বিধিমালা চান কর্মচারীরা, এনবিআরকে সময় দিতে রাজি নয়

কর বিভাগের খসড়া বিধিমালা

** একটি মহল কর বিভাগের খসড়া বিধিমালা বানচাল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্মচারীরা
** কর পরিদর্শক পদে কোটা মুক্ত পদোন্নতি এবং নোটিশ সার্ভার ও নিরাপত্তা প্রহরীদের পদোন্নতি দেয়ার দাবি
** দ্রুত খসড়া বিধিমালা অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান

কর বিভাগের কর্মচারীরা দীর্ঘদিন থেকে পদোন্নতি বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে কোটা প্রথার কারণে বেশি বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ বিধিমালার কারণে বিভিন্ন গ্রেডের কর্মচারীদের পদোন্নতিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কর্মচারীদের দাবির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ‘কর বিভাগ (১০ম গ্রেড হতে ২০তম গ্রেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৪’ খসড়া প্রকাশ করেছে। তবে এই বিধিমালা বানচালে একটি মহল চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কর্মচারীরা। বিশেষ করে এনবিআর খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত করতে কালক্ষেপণ করার কারণে এই সুযোগ নেয়া হচ্ছে। ফলে খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত করতে এনবিআরকে আর সময় দিতে রাজি নন কর্মচারীরা। তাদের দাবি, বিধিমালা চূড়ান্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদোন্নতি দিতে হবে। একইসঙ্গে এই বিধিমালা কোটামুক্ত হতে হবে।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমানের সঙ্গে কর বিভাগের কর্মচারীদের চারটি সংগঠনের ছয়জন প্রতিনিধি দেখা করেন। এসময় চেয়ারম্যান তাদের দ্রুত বিধিমালা চূড়ান্ত করার আশ্বাস দেন। দাবি আদায়ে চারটি সংগঠনের প্রায় দুই শতাধিক কর্মচারী চেয়ারম্যানের রুমের সামনে জড়ো হয়েছেন।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্টেনোগ্রাফার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (বিএসডব্লিউএস-ট্যাকসেস ইউনিট) আহ্বায়ক মো. মইনুল করিম; ১১-২০তম গ্রেডের কর কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. জিন্নাতুল ফেরদৌস ও সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম; বাংলাদেশ ট্যাকসেস স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএসসিএ) এর সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান; বাংলাদেশ ট্যাকসেস (১৭-২০তম গ্রেড) সরকারী কর্মচারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকার সভাপতি মো. আজিজ হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক মো. মঞ্জিল মিয়া।

  • দেখা করার পর সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, আমরা একটি দাবি জানিয়েছি। তাহলো-খসড়া নিয়োগ বিধিমালা অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে দ্রুত প্রেরণ করা এবং তা বাস্তবায়ন করে পদোন্নতি প্রদান করা। আমরা চেয়ারম্যান জানিয়েছি, পদোন্নতি বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হওয়া কর্মচারীরা এর আগে সদ্য বিদায় নেওয়া সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) এর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি ১০ দিনের মধ্যে নিয়োগ বিধি সংশোধন করার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু ১০ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো সংশোধন হয়নি। বর্তমান চেয়ারম্যান বলেছেন আমার নিকট ফাইল আসলে এক সেকেন্ডও আটকিয়ে রাখবো না। ফাইল দ্রুত রেডি করতে আমি মেম্বারকে বলে দিয়েছি। পরে কর্মচারীরা বর্তমান সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) এর সঙ্গে দেখা করেন। দাবি জানান, যাতে সংশোধিত বিধিমালা দ্রুত আইআরডিতে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে দ্রুত সংশোধিত বিধিমালার কাজ শেষ করার অনুরোধ জানান। সদস্য কর্মচারীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, সংশোধিত বিধিমালায় কোন কোটা রাখা হয়নি। আমরা দ্রুত পাঠানোর চেষ্টা করছি। পরে কর বিভাগের কর্মচারীরা প্রথম সচিব (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) এর সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি জানান। প্রথম সচিব কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোটার জন্য এত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। আবার এখানে কেন কোটা থাকবে। খসড়াতেও কোটা রাখা হয়নি। কোটা পদ্ধতিতে কোন প্রমোশন দেয়া হবে না।
  • আন্দোলনরত কর বিভাগের কর্মচারীদের নেতারা জানিয়েছেন, আয়কর বিভাগের কর্মচারীদের চারটি সংগঠন আমরা একমতে উপনীত হয়েছি যে, এনবিআরকে আমরা আর সময় দিতে রাজি নয়। আমাদের দাবি একটাই, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ বিধি চূডান্ত করতে হবে। নেতারা আরো জানিয়েছেন, কোটা পদ্ধতিতে প্রমোশন না দেয়ার জন্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে। এনবিআর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেছিল। সেখানেও এনবিআর হেরে গেছে। আর কোটা পদ্ধতিতে প্রমোশন দিলে আরো ১০০ মামলা হবে। অনেক রক্ত ঝড়বে।

    অপরদিকে, ১১-২০ তম গ্রেডের কর কর্মচারী ঐক্য পরিষদ এর নেতারা জানিয়েছেন, ‘কর বিভাগ (১০ম গ্রেড হতে ২০তম গ্রেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৪’ এর উপর মতামত দেওয়া হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি একটি মহল খসড়া নিয়োগ বিধিমালা বাস্তবায়ন কার্যক্রম বানচাল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নিয়োগ বিধি, ২০১৬-এ বৈষম্যপূর্ণ কোটা রাখা হয়েছিল। নোটিশ সার্ভার ও নিরাপত্তা প্রহরীদেরকে পদোন্নতি বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। সংগঠনের পক্ষ থেকে এনবিআরের কাছে চারটি মতামত তুলে ধরা হয়েছে। তাহলো-কর পরিদর্শক পদে পদোন্নতির জন্য বিভাগীয় পরীক্ষা নীতিমালা, ২০১৭ বহাল রাখা; কর পরিদর্শক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ফিডার পদে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির বিধান করা; দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ বিধি সংশোধন পূর্বক গেজেট আকারে প্রকাশ করা।

    বাংলাদেশ স্টেনোগ্রাফার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (বিএসডব্লিউএস-ট্যাকসেস ইউনিট) এর নেতারা জানিয়েছেন, নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৬ একটি বৈষম্যপূর্ণ বিধিমালা। এই বিধিমালায় কর পরিদর্শক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ফিডার পদগুলির জন্য বৈষম্যমূলক কোটা রাখা হয়েছে। যার ফলে একজন উচ্চমান সহকারী (গ্রেড-১৪) পদোন্নতির মাধ্যমে আমাদের (স্টেনোগ্রাফার) গ্রেডে (গ্রেড-১৩) ৯-১০ বছর পরে এসে আমাদের আগে কর পরিদর্শক (গ্রেড-১০) পদে পদোন্নতি পেয়ে যাচ্ছেন; যা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক। বৈষম্যপূর্ণ নিয়োগ বিধি সংশোধনের জন্য ২০১৯ সালের ২৫ জুন কর কমিশনার মো. সেলিম আফজালকে সভাপতি করে একটি কমিটি করা হয়। কোন একটি মহলের অপতৎপরতার কারণে সেই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয় বিধায় কোটা প্রথা বহাল থাকে। ২০২২ সালের ২০ জুলাই সাবেক প্রথম সচিব মো. শাহিদুজ্জামানকে সভাপতি করে দ্বিতীয়বার কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দুই বছর পর চলতি বছরের ২১ জুলাই ‘কর বিভাগ (১০ম গ্রেড হতে ২০তম গ্রেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৪ এর খসড়া প্রকাশ করেছে।

    প্রকাশিত এই খসড়া তালিকাও একটি মহল বানচাল করার অপতৎপরতা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করে নেতারা বলেন, যেহেতু নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৬-এ বৈষম্যপূর্ণ কোটা ছিল। এবং আমরা ২০১৯ সাল থেকে কোটা বাতিল করার জন্য আবেদন করে যাচ্ছি। সর্বোপরি সারাদেশে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা প্রথা বিলোপের জন্য ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছেন। ২০২৪ সালে কোটার জন্য বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। সেহেতু কর পরিদর্শক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোটা প্রথা থাকতে পারে না। তাছাড়া কর বিভাগের বর্তমান নিয়োগ বিধিমালা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারী জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি) বিধিমালা, ২০১১’ এর পরিপন্থী। সেজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘কর বিভাগ (১০ম গ্রেড হতে ২০তম গ্রেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৪’ চূড়ান্ত করে কর পরিদর্শক পদে পদোন্নতি প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

    অপরদিকে, বাংলাদেশ ট্যাকসেস স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএসসিএ) এর নেতারা একইভাবে বাংলাদেশ স্টেনোগ্রাফার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এর দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে কোটা প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে কর পরিদর্শক পদে পদোন্নতির জন্য বিভাগীয় পরীক্ষা নীতিমালা, ২০১৭ বহাল রাখা এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ বিধি সংশোধন পূর্বক গেজেট আকারে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন।

    বাংলাদেশ ট্যাকসেস (১৭-২০তম গ্রেড) সরকারী কর্মচারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা নেতারা জানিয়েছেন, কর বিভাগ (১০ম গ্রেড হতে ২০তম গ্রেড কর্মচারী), নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৪-এর খসড়ার উপর আমাদের সংগঠন থেকে একটি মতামত দেয়া হয়েছে। তাহলো দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ বিধি সংশোধন পূর্বক গেজেট আকারে প্রকাশ করা।

    **

    যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!