উন্নত বিশ্বের কর ব্যবস্থা এখন তৃতীয় প্রজন্মে প্রবেশ করেছে। উন্নয়নশীলদের কেউ আছে প্রথম প্রজন্মে, কেউ দ্বিতীয় প্রজন্মে। প্রথম প্রজন্মের কর ব্যবস্থা প্রাগৈতিহাসিক কর-আদায় মনস্তত্ত্বের ধারাবাহিকতা। করদাতার সুবিধা-অসুবিধার গুরুত্ব কম। ট্যাক্স অথরিটিই সর্বেসর্বা। তারা নিজেদের সুবিধার কথা ভেবে সিস্টেম বানায়। কাজকর্ম প্রায় সব কিছু ম্যানুয়েল, পেপার-বেইজড। অনুমানের ভিত্তিতে প্রচুর অডিট হয়। অসংখ্য অ্যাসেসমেন্ট হয় প্রাক্কলনের ভিত্তিতে।
তথ্য-প্রযুক্তি আসার পর কর ব্যবস্থার দ্বিতীয় প্রজন্ম শুরু। এখানে ট্যাক্স অথরিটি সর্বেসর্বা না। করদাতার সাথে তার “বিজনেজ-ক্লায়েন্ট” সম্পর্ক। করদাতার সুবিধা-অসুবিধা বেশ গুরুত্ব পায়। প্রযুক্তিকে embrace করা শুরু হয়। বিজনেজ প্রসেসের অটোমেশন হয়। অনুমানের পরিবর্তে ইনফরমেশনের ভিত্তিতে অডিট হয়। data-driven অ্যাসেসমেন্ট হয়। কর বিভাগের কাজে একটা ট্রান্সপারেন্সী থাকে। তৃতীয় প্রজন্ম আরো আধুনিক। তৃতীয় প্রজন্মের কর ব্যবস্থা নাগরিক-কেন্দ্রিক। taxpayer-centric. ট্যাক্স সিস্টেমটা এমনভাবে সাজানো হয়, কর দেওয়ার বিষয়টা কেউ টের পায় না। কোথাও যেতে হয়না। বাড়তি কিছু করতে হয় না। প্রাত্যহিক জীবন-যাপনের ফাঁকে কর দেওয়া হয়ে যায়। Tax just happens.
২. শক্তিশালী সমাজ চাইলে ভালো কর ব্যবস্থা লাগবে। নাগরিকদের চাওয়া-পাওয়া, সুবিধা-অসুবিধাকে কেন্দ্র করে যে কর ব্যবস্থা গড়ে উঠে, সেটাই সবচেয়ে ভালো কর ব্যবস্থা। সেই তৃতীয় প্রজন্মের কর ব্যবস্থাতেই আমাদের যেতে হবে। যেখানে কর দিতে নাগরিকদের বাড়তি কিছু করতে হবে না। নিজের স্বাভাবিক জীবনযাপনের প্রতিবেশে টের-না-পাওয়া ভাবে কর ‘দেওয়া হয়ে যাবে’। Tax will just happen.
৩. বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা কোন প্রজন্মে আছে? তৃতীয় প্রজন্মে কি আমরা যেতে পারবো? তৃতীয় প্রজন্মের কর ব্যবস্থায় আমরা অবশ্যই যেতে পারি। সেক্ষেত্রে আগে দ্বিতীয় প্রজন্ম পার হয়ে আসতে হবে। তার জন্য পরিকল্পনা লাগবে। নেতৃত্ব লাগবে। আর, অতি অবশ্যই, digital transformation লাগবে। তৃতীয় প্রজন্মের কর ব্যবস্থায় যেতে চাইলে কী করতে হবে? ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের নেতৃত্বে একটা টিম এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছে, Digital Transformation of Income Tax Administration রিপোর্টে। কাজটার সাথে থাকতে পারা আনন্দের ছিলো।
শব্বির আহমেদ
কর কমিশনার (চলতি দায়িত্ব)
কর অঞ্চল-বরিশাল
(ফেসবুক থেকে নেয়া)