দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘আমরা বড় ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে তাঁদের দেশে থাকা সম্পদ জব্দ করার উদ্যোগ নিয়েছি। পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে চেষ্টা চলছে। এ জন্য বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সামনে আরও আলোচনা হবে। আমরা অর্থ ফেরত আনতে ও কারিগরি সহায়তা দিতে তাঁদের আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তা জব্দের জন্য বলছি।’ তিনি বলেন, কেবল যুক্তরাজ্যেই একজনের ৫০০-৬০০ বাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। আরও অনেকের এমন সম্পদ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বড় গন্তব্য যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব অর্থ ফেরাতে চেষ্টা করে যাচ্ছি, দেখা যাক কী হয়।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সভা শেষে গভর্নর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। গর্ভনর বলেন, সমস্যায় পড়া ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের স্বার্থ বাংলাদেশ ব্যাংক দেখছে। এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের পাশে সরকার আছে। ব্যাংকগুলোর অবস্থা উন্নয়নে এগুলোর পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ সময় আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন তিনি।
সাংবাদিকদের গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাত থেকে বিভিন্নভাবে বড় ধরনের অর্থ পাচার হয়ে গেছে। মূলত সাত-আটটি ব্যাংক থেকে এই অর্থ বের হয়েছে। ফলে এসব ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো টাকা ছাপিয়ে এসব ব্যাংককে দেবে না। তাতে দুই লাখ কোটি টাকা ছাপাতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতি, ডলারের দাম—সবকিছু ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যাবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা তারল্যসংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে সীমিত আকারে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এসব ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে টাকা আমানত হিসেবে পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) দেবে।’ তিনি আরও বলেন, সাত-আটটি ব্যাংকে সমস্যা থাকলেও পুরো ব্যাংকিং কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। সমস্যায় পড়া ব্যাংকের আমানতকারীদের রক্ষা করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, যে ব্যাংকগুলো এখন সমস্যায় পড়েছে, আমরা বেশ আগে থেকেই তাদের বিষয়ে জানতাম। এমনকি যাঁরা টাকা জমা রেখেছেন, তাঁরাও সেটা জানতেন। বেশি মুনাফায় আশায় অনেকে এসব ব্যাংকে টাকা রেখেছেন। ফলে এসব ব্যাংক থেকে বেশি টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ পেয়েছেন। যাঁরা টাকা জমা রেখেছেন, তাঁদের কিছুদিন ধৈর্য ধরতে হবে।
গভর্নর বলেন, বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যবস্থাপনাতেও পরিবর্তন আসবে। এসব ব্যাংকে নিরীক্ষা করা হবে। এরপর ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এসব ব্যাংক পুনর্গঠন করে একা চলবে, নাকি কারও সঙ্গে একীভূত হবে, সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে। ছোট ব্যাংক হলে অবসায়নও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেক টাকা নাই হয়ে গেছে। ১-২ বছর সময় লাগবে এসব ব্যাংক মেরামত করতে।
অপরদিকে, তারল্য সংকটে জেরবার কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে সচল রাখতে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের জামিনদারিতে আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে নগদ টাকার ঋণ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। নগদ টাকার অভাবে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় গ্রাহকের চাহিদা মত টাকা দিতে পারছে না ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক। উদ্ভূত সংকট মোচনের দিক নির্দেশনা নিয়ে বুধবার সাংবাদ সম্মেলনে এসে গভর্নর আহসান মনসুর বলেছেন, ‘এসব ব্যাংক যে তারল্য সংকটের মধ্যে আছে, তা সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমরা চাচ্ছি, সীমিত আকারের হলেও গ্রাহককে তার অর্থ ফেরত দেওয়ার মত ব্যবস্থা করতে। এসব ব্যাংককে বেইল আউট করতে গেলে ২ লাখ কোটি টাকার দরকার হবে। এর সমপরিমাণ টাকা ছাপালে ম্যাক্রো ইকোনমি স্ট্যাবিলিটি নষ্ট হয়ে যাবে, বৈদেশিক মুদ্রার দর ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে, মূল্যস্ফীতিও ২৫ (শতাংশ) ছাড়িয়ে যাবে। আমরা চাচ্ছি মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনে ডলার দরকে আপাতত ১২০ টাকার মধ্যেই রাখতে।
***