গত বছর রমজানে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে সরু চালের কেজি ছিল ৬২-৬৪ টাকা, যা এখন বেড়ে ৮০-৮১ টাকায় পৌঁছেছে। প্রতি কেজিতে বেড়েছে অন্তত ১৭ টাকা। একইভাবে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মাঝারি ও মোটা চাল।
এই রমজানেও চালের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে কেজিতে বেড়েছে ২-৩ টাকা। বোরো ধান বাজারে আসার আগে আরও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
মিল মালিকরা জানান, খাজানগর মোকামে অটো ও হাসকিং মিলে সাড়ে ৩ শতাধিক চালকল আছে। গত আমন মৌসুমে বাম্পার ফলন হলেও দামে প্রভাব পড়েনি। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ধানের দাম দেশের বাজারে রেকর্ড ছুঁয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মোকামে সরু জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২ হাজার ১০০ টাকা মণ। আর সর্বনিম্ন মোটা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ। এর মাঝামাঝি নানা দামে মিলছে ধান।
খাজানগরের দাদা রাইস মিলের মালিক আরশাদ আলী জানান, দেশের বাজারে এখন রেকর্ড দামে সরু ধান বিক্রি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে এক মণ (৩৭ কেজি) সরু ধান বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকায়। তাও চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না।গত বছর এই সময়ে সরু ধান ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তখন চালের কেজি ছিল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা। এবার ধান ও চাল দুটির দামই বেড়েছে।
আরশাদ আলী বলেন, ‘গত বছর আট জেলায় বন্যায় ক্ষতি হওয়ায় আমরা চাল আমদানি করতে বলেছিলাম। এলসির চাল ঠিকমতো দেশে এসেছে কিনা, নজরদারি করতে হবে। আর কৃষি বিভাগ ধান উৎপাদন নিয়ে যে পরিসংখ্যান দেয়, সেটা যাচাই করা দরকার। বাস্তবতার সঙ্গে এর মিল থাকলে ধান ও চালের দাম এত হওয়ার কথা না।’
মিল মালিকরা অভিযোগ করেন, আমদানি করা চাল অনেক মিল মালিক বস্তা পরিবর্তন করে মিনিকেট বলে বেশি দামে বেচেন। এ কারণে বাজারে প্রভাব পড়ছে না।বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আমদানি করা সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭১ টাকা কেজিতে। মান খুব একটা ভালো নয়।
চৌড়হাসের খুচরা ও পাইকারি দোকান মিরাজ স্টোরের মালিক মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানের আগের তুলনায় এখন প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। ২৫ কেজির এক বস্তা চালে আগের চেয়ে প্রায় ৬০ টাকা বেশি দিয়ে কিনছি। তাও অর্ডার দিয়ে চাল পাচ্ছি না। আগে কেনা চাল ৭৯ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এই সময় সরু, মাঝারি ও মোটা চালের দাম অনেক বেড়েছে।’মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৬ টাকা কেজিতে। এর চেয়ে একটু মোটা চাল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। আর একেবারে মোটা চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা।
খাজানগর মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধান সংকট ও দাম বেশি হওয়ায় ৬০ ভাগ মিলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। বৈশাখ মাসের আগে আরও ১০ থেকে ১৫ ভাগ মিল সাময়িক বন্ধ হতে পারে। নতুন বোরো ধান বাজারে আসার পর আবার উৎপাদনে ফিরতে পারবে এসব মিল। এ কারণে মোকামে উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। এক মাসের বেশি ধান ও চাল মজুত রাখত যারা, এখন তা পারছে না। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কমেছে চালের। ধানও কম আসছে বাইরের মোকাম থেকে।
চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, ‘ধানের বাজারে মনিটরিং নেই। এখন তো কৃষকের ঘরে ধান নেই। অসাধু ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা ধান স্টক করে বেশি দামে বিক্রি করছে। দেশের বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকায়। সেখানে চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।’তিনি জানান, চাল আমদানির ওপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি খোলাবাজারে কম দামে চাল বিক্রির পরিমাণ বাড়াতে হবে।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আল ওয়াজিউর রহমান বলেন, ‘আমন মৌসুম শেষের দিক হওয়ায় ধানের সংকট আছে। আমরা প্রতিনিয়ত ধানের বাজার মনিটর করছি। কিছু জাতের ধান কম থাকায় দাম বাড়ছে। মিলগুলোতে নজরদারি আছে। ইচ্ছা করে দাম বাড়ানো ও মজুত করলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
**রমজানে স্বস্তি বাজারে, অস্বস্তি শুধু চালের দামে
**সিন্ডিকেটের কবলে চাল আমদানি