কুয়াকাটায় ৫ কোটি টাকার রাস্তা সমুদ্রগর্ভে

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে সাগরের পানির লেভেলের কাছে নির্মাণাধীন আরসিসি সড়কটি জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গিয়ে এখন সমুদ্রগর্ভে। প্রায় ৫ কোটি টাকার এ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াসিন সাদেকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় পৌরসভার প্রকৌশলীরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

পরবর্তীতে কমিটির সদস্যরা পৌরসভা মিলনায়তনে এক সভা করেন। কমিটির প্রধান মো. ইয়াসিন সাদেক জানান, তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হবে। এর আগে, গত ২৯ মে ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন নির্মাণাধীন রাস্তাটি ধসে পড়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম।

কুয়াকাটা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, অপসারিত মেয়র আনোয়ার হাওলাদার তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে এ কাজ শুরু করেন। জানা যায়, টেন্ডারের আগে থেকেই কাজ শুরু হয়েছিল।

নথিপত্র অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় ‘সাগরপারের সি কুইন থেকে ঝাউবাগান পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ মিটার আরসিসি রাস্তা নির্মাণ’ নামে একটি প্রকল্পে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এই প্রকল্পের কাজ তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হচ্ছিল—মেসার্স আবরার এন্টারপ্রাইজ (৪৫০ মিটার), এসএম ট্রেডার্স (৪৫০ মিটার) এবং মোল্লা ট্রেডিং (৪০০ মিটার)। ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ কার্যাদেশ দেওয়া হয় এবং কাজ শেষ করার সময়সীমা ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ নির্ধারিত ছিল। তবে কাজের অগ্রগতি ধীরগতির কারণে সময়সীমা আরও ৭২ দিন বাড়ানো হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত রাস্তাটির নির্মাণ অগ্রগতি ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ।

মূলত কুয়াকাটা পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগী কাগজে-কলমে এ কাজের দায়িত্বে ছিলেন। তারা হলেন—পৌর শ্রমিক লীগ সদস্য সচিব ছগির মোল্লার মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স, পৌর শ্রমিক লীগ যুগ্ম আহ্বায়ক বেলাল হোসেনের মেসার্স আবরার ট্রেডার্স, এবং পৌর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর অভিনেতা সাদ্দাম মালের এস এম ট্রেডার্স। ইউএনও তদন্ত কমিটি গঠনের চিঠিতে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে, সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন নির্মাণাধীন রাস্তাটি খুবই দৃষ্টিকটুভাবে ভেঙে পড়েছে। রাস্তাটির নির্মাণকাজ নিম্নমানের; স্থানীয় বালু ও পাতলা সিসি ঢালাই করে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে। নির্মাণের পরিকল্পনায় কোনো সম্ভাব্যতা যাচাইও করা হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় জনগণ, গণমাধ্যম এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও প্রকল্প কমিটি ও তৎকালীন পৌর কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করেছে। সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন থেকে কাজটির তদারকিতে নিয়োজিত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে আসছেন। স্থানীয়রা প্রশ্ন করছেন, সাগরের জোয়ারের লেভেলের কাছাকাছি এই রাস্তা নির্মাণ করা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল। এছাড়া প্রকল্প প্রণয়নের সময় কোনো সমীক্ষা করা হয়েছিল কি না, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত নেওয়া হয়েছে কি না—এসব প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক মারছে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে। ঠিকাদারদের বকেয়া বিল বাজেয়াপ্ত করে জামানত থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে।

অপসারিত মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানিয়েছেন, প্রকল্পটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার দিয়ে শুরু করা হয়েছে এবং বর্তমানে শুধু সিসি কাজ চলছে। পরবর্তীতে আরসিসি কাজ করা হবে। ঢেউয়ের আঘাত থেকে রক্ষা পেতে গাইডওয়ালের ডিজাইন রয়েছে। কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক আগেই জানিয়েছিলেন, রাস্তাটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ঠিকাদারের মাধ্যমে মেরামত করা হবে। এছাড়া সাগরের ঢেউ থেকে রক্ষার জন্য রিটেইনিং ওয়াল, জিও ব্যাগ ও অন্যান্য প্রটেকশন ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!