কাস্টম হাউস-শুল্ক স্টেশন-বিমানবন্দরে ‘সীমান্ত বাণিজ্য সমন্বয় কমিটি গঠন’

আমদানি-রপ্তানি ও বাণিজ্য সহজীকরণে

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এবং দ্রুততম সময়ে কাস্টমস প্রক্রিয়াদি সম্পন্নের পরেও কোন কোন পণ্যচালান খালাসে দীর্ঘ সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে করে বাণিজ্য ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং প্রতিযোগীতামূলক বাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। তবে আমদানি-রপ্তানি ও ট্রানজিট বাণিজ্য সহজীকরণের উদ্দেশ্য পূরণে স্থানীয় পর্যায়ে ‘বর্ডার এজেন্সি করপোরেশন’ এবং ‘কনসালটেশনের’ জন্য দেশের সব কাস্টম হাউস-দুইটি বিমানবন্দর ও কয়েকটি শুল্ক স্টেশনে একটি করে ‘সীমান্ত বাণিজ্য সমন্বয় কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। বাণিজ্য সহজীকরণ নিশ্চিতকল্পে সীমান্ত বাণিজ্য সমন্বয়ে এনবিআর সম্প্রতি এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এনবিআরের প্রথম সচিব (কাস্টমস: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও চুক্তি মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ছয়টি কাস্টম হাউস হলো-কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম, কাস্টম হাউস ঢাকা, কাস্টম হাউস মোংলা, কাস্টম হাউস বেনাপোল, কাস্টম হাউস আইসিডি-কমলাপুর, কাস্টম হাউস পানগাঁও। আমদানি-রপ্তানি ও ট্রানজিট এর পরিমাণ বিবেচনায় যে সকল কাস্টম স্টেশনসমূহ অধিক গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো হলো-ভোমরা (সাতক্ষীরা), দর্শনা (চুয়াডাঙ্গা), সোনামসজিদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), হিলি (দিনাজপুর), বাংলাবান্ধা (পঞ্চগড়), বুড়িমারী (লালমনিরহাট), তামাবিল (সিলেট), শেওলা (সিলেট), আখাউড়া (ব্রাহ্মনবাড়িয়া), টেকনাফ (কক্সবাজার) স্থল কাস্টমস স্টেশনে। দুইটি বিমানবন্দর হলো-ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টম স্টেশন সিলেট, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টম স্টেশন চট্টগ্রাম।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনের কমিশনারকে আহ্বায়ক ও উপ কমিশনারকে সদস্য সচিব করে এই সীমান্ত বাণিজ্য সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৪ সদস্যের কমিটিতে আরও ২২টি সংস্থার প্রতিনিধি থাকবেন। যেসব সংস্থার প্রতিনিধি থাকবেন-বন্দর কর্তৃপক্ষ বা সিভিল এভিয়েশন; বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ; ইমিগ্রেশন বিভাগ; বাংলাদেশ বিমান; উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর, কৃষি মন্ত্রণালয়; প্রাণি সংগনিরোধ দপ্তর, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; বিস্ফোরক অধিদপ্তর; বাংলাদেশ নৌবাহিনী; বিএসটিআই; সোনালী ব্যাংক লিমিটেড; বাংলাদেশ ব্যাংক; পরমাণু শক্তি কমিশন; চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ; সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন; ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন বা ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন; শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন; কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন; স্থানীয় পুলিশ (মেট্রোপলিটান-থানা-ট্রাফিক-এপিবিএন);কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর; শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট; অন্যান্য দপ্তর বা নিজ দপ্তরের অন্য কোন প্রতিনিধি।

ডব্লিউটিও-টিএফএ এর আলোকে কমিটির কার্যপরিধি হলো-স্ব স্ব কাস্টম হাউস, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্থল কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি ও ট্রানজিট বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ চিহ্নিতকরণ ও তা বিদ্যমান আইনের বিধান অনুযায়ী নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ; ন্যাশনাল ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ; প্রত্যেক তিন মাসে সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউসে, বিমানবন্দর কাস্টমস স্টেশনে, স্থল কাস্টমস কাস্টমস স্টেশনে ন্যূনতম একটি সভা আয়োজন এবং সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিদের মতামতের আলোকে বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাসমূহ নিরসনে যথাযথ প্রস্তাব সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ, ফলো-আপ এবং সমন্বয় সাধন; কার্যদিবস ও কার্যঘণ্টা প্রয়োজনানুসারে অভিন্ন রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন; আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজীকরণে অভিন্ন প্রক্রিয়া ও আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন; উন্নয়ন ও অভিন্ন সেবা পরিকাঠামো বিনিময়-এর উদ্যোগ গ্রহণ; পারস্পরিক তথ্য ও উপাত্ত আদান-প্রদান, সহযোগিতা, সমন্বয় সাধন ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যৌথ নিয়ন্ত্রণ মূলক কার্যক্রম; ওয়ান-স্টপ বর্ডার পয়েন্ট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ও যোগাযোগ রক্ষা; কো-অর্ডিনেটেডে বর্ডার ম্যানেজমেন্ট বা ইন্ট্রিগেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বয় এবং জাতীয় পর্যায়ের জন্য সুপারিশ প্রেরণ; বাণিজ্য সহজীকরণ সংক্রান্ত সুপারিশ প্রনয়ণ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ; প্রয়োজনবোধে বাণিজ্য সংশিষ্ট দপ্তর বা এজেন্সীর প্রতিনিধি উক্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্তকরণ; বাণিজ্য সহজীকরণ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কার্যাবলী।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কাস্টমস স্টেশন ব্যতীত অন্যান্য কাস্টম স্টেশনসমূহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিশনার আমদানি-রপ্তানি ও ট্রানজিট এর পরিমাণ ও গুরুত্ব বিবেচনাক্রমে কমিশনারের পরিবর্তে একই দপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার বা যুগ্মকমিশনারকে কমিটির আদলে সীমান্ত বাণিজ্য সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করতে পারবেন। এতে কার্যপরিধিসহ বর্ণিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কাস্টম হাউস, বিমানবন্দর কাস্টমস স্টেশন, স্থল কাস্টমস স্টেশনভিত্তিক সীমান্ত বাণিজ্য সমন্বয় কমিটি গঠন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য সহজীকরণের অংশ হিসেবে ২০১৩ সালে ডব্লিউটিও ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্টচূড়ান্ত করা হয়। এই চুক্তিটি ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কার্যকর হয়। বাংলাদেশ চুক্তিটিতে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর অনুসমর্থন প্রদান করে। এই চুক্তির আওতায় বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে কাস্টমসের প্রয়োজনীয় পদ্ধতি ও কাঠামোগত সংস্কার, দরকারি তথ্য-উপাত্ত প্রাপ্তি সহজীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এনবিআর নানামুখী উদ্যাগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে বাণিজ্য সহজীকরণ নিশ্চিতকল্পে এনবিআর সীমান্ত সংস্থা এবং অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য পরামর্শ সভা গঠন একটি অন্যতম পদক্ষেপ।

পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে-পণ্যচালান খালাসে তথ্য-উপাত্তভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেট গঠন; পণ্যচালান খালাসের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে অনলাইনে তথ্য-আদান প্রদানের মাধ্যমে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্প গ্রহণ; আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব প্রদানের নিমিত্ত ওয়েবভিত্তিক ন্যাশনাল ইনকোয়ারি পয়েন্ট চালুকরণ; কায়িক ও দলিলাদি পরীক্ষণ ব্যতিরেকে সরাসরি পণ্য খালাস প্রদানের জন্য উত্তমচর্চাকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সুবিধা চালু; আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যচালান বন্দরে পৌঁছার পূর্বেই যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা পরিপালন করে পণ্যচালান বন্দরে আসামাত্রই খালাস প্রদানের লক্ষ্যে প্রি-অ্যারাইভাল প্রসেসিং (পিএপি) ব্যবস্থা চালু; পণ্য খালাসপ্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য খালাসোত্তর নিরীক্ষা পদ্ধতি চালু, পঁচনশীল পণ্য দ্রুত খালাসকরণ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য সহজীকরণে এনবিআর গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপের ফলে ইমপ্যাক্ট পর্যালোচনার জন্যে ডব্লিউসিও এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংস্থাটির এই সংক্রান্ত প্রায়োগিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পণ্য খালাস প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংস্থার সক্রিয় অংশগ্রহণে এনবিআর ২০২২ সালে ‘টাইম রিলিজ স্টাডিজ (টিআরএস)’ সম্পন্ন করেছে। স্টাডিতে দেখা গেছে, এনবিআর নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এবং দ্রুততম সময়ে কাস্টমস প্রক্রিয়াদি সম্পন্নের পরেও কোন কোন পণ্যচালান খালাসে দীর্ঘ সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে করে বাণিজ্য ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। এই স্টাডিতে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের জন্য পণ্য খালাসের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। স্টাডিতে আরও দেখা গেছে, পণ্যচালান আমদানি-রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহ যেমন-কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ, উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ দপ্তর, প্রাণী সংঙ্গনিরোধ দপ্তর, ব্যাংক, বিএসটিআই, বিজিবি, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ, সিএন্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স, শিপিং এজেন্টস, স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন প্রভৃতি এর মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় করা গেলে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর করা সম্ভবপর হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর ‘সীমান্ত বাণিজ্য সমন্বয় কমিটি গঠন’ করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য মাঠপর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে কাস্টমস। তাছাড়া ডব্লিউটিও-টিএফএ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে লিড এজেন্সি হলো কাস্টমস। একইসাথে আমদানি-রপ্তানি ও ট্রানজিট সংক্রান্ত কার্যক্রম যে সকল সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন স্থল, নৌ, বিমানপথে পরিচালিত হয়ে থাকে-তার মধ্যে একমাত্র কাস্টমস এর কার্যক্রম সকল স্থানে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!