নিজস্ব প্রতিবেদক: কাস্টমস বিভাগে চাকরির চেষ্টা করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। চাকরি হয়নি, প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছেন টাকা। এই জেদে এক পর্যায়ে নিজেই বনে যান ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা। গড়ে তোলেন প্রতারক চক্র। এবার নিজেই কাস্টমস বিভাগে চাকরি দেয়া ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিতেন। এছাড়া বিদেশে পাঠানো, ভিসা তৈরি, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে মালামাল ছাড়িয়ে আনা, জমি ক্রয়-বিক্রয়সহ নানান অপকর্ম করে হাতিয়ে নিতেন টাকা। এই চক্রের মূলহোতা নজরুল ইসলাম (২৯)। অবশেষে ভুয়া এই কাস্টমস কর্মকর্তা চক্রের হোতা নজরুল ইসলাম ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে ওই চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে, বিদেশে লোক পাঠানো, ভিসা তৈরি, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে মালামাল ছাড়িয়ে আনার কথা বলে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে। মঙ্গলবার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী র্যাব-১০ এর কাছে আইনি সহায়তা চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ওইদিন রাতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল নজরুল ইসলাম ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। তিন সহযোগী হলেন-মো. ওয়ায়েশ করোনী ওরফে সেলিম (৪৭), মো. নাসির উদ্দিন (২৬) ও সৈয়দ মো. এনায়েত (৪৮)। তাদের কাছ থেকে প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, দুইটি মোটরসাইকেলসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘চক্রটি প্রায় দুই বছর ধরে প্রতারণার কাজ করে আসছে। চক্রের সদস্য সাত থেকে আটজন। মূল হোতা নজরুল। অন্য সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার চাকরি প্রত্যাশীদের অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নজরুলের কাছে আনতো। সে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি প্রত্যাশীদের থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিতো।’
তিনি বলেন, ‘তারা চাকরি দেওয়াসহ বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে অসংখ্য ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া চক্রটি তাদের গাড়িতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ব্যবহার করে রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় ব্যবসায়ী, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন রিসোর্ট ও ব্যবসায়ীদের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতো। চক্রটির স্থায়ীভাবে কোনও অফিস ছিল না, সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ওয়ায়েশ করোনীর ভাড়া বাসাকে অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। আত্মগোপনের জন্য তারা প্রায়ই নিজেদের মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখে আত্মীয় ও বন্ধুদের বাসায় অবস্থান করতো।’
বিএ পাস নজরুল ২০১২ সালে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরির আশায় এক প্রতারককে ১১ লাখ টাকা দিলেও চাকরি হয় না। পরে ২০১৩ সালে নৈশপ্রহরী এবং ২০১৭ সালে উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে পুনরায় আবেদন করে প্রতারিত হয়। বিভিন্ন সময় কাস্টমসে চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং কাস্টমসের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সান্নিধ্যে আসার সুবাধে কাস্টমসের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সে ধারণা লাভ করে। পরে নিজে প্রতারক চক্র গড়ে তোলে।কাস্টমসের বিভিন্ন পদে (পিয়ন, ঝাড়ুদার ও অন্যান্য পদে) কয়েকজনকে চাকরি দিয়ে অন্যদের কাছে বিশ্বস্ততা অর্জন করে। কাস্টমসের অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার ও রেভিনিউ অফিসার সুপারিনটেনডেন্ট কর্মকর্তা পরিচয়ে সে প্রতারণা কাজ করতো। এছাড়া বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে দেশের বাইরে থেকে আসা স্বর্ণ ও মালামাল অর্থের বিনিময়ে ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ করতো। প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট বুকিং, জমি কেনা, বাড়ি ও বিভিন্নভাবে নিজের নামে অর্থ-সম্পদ গড়ে তোলে নজরুল।
ওয়ায়েশ করোনী ওরফে সেলিম দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দেশে এসে একটি এজেন্সিতে চাকরি শুরু করে। নজরুলের সঙ্গে প্রায় ১০ থেকে ১১ বছরের পরিচয়ের সুবাদে এই চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় সে। তার দায়িত্ব ছিল বিদেশে লোক পাঠানো এবং ভিসা তৈরি করা।
সৈয়দ মো. এনায়েত অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবা পাঠাওয়ের চালক ছিল। প্রায় এক বছর আগে নজরুলের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সেই সুবাদে নজরুলের পরামর্শে মাসে ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়। সে চাকরি প্রত্যাশীদের নজরুলের কাছে নিয়ে আসতো। নিজেকে নজরুলের ড্রাইভার বলে পরিচয় দিতো।’
নাসির উদ্দিন ওরফে আবির নজরুলের চালের দোকানের কর্মচারী ছিল এবং মোটরসাইকেল চালাতো। সে চাকরি প্রত্যাশীদের নজরুলের কাছে নিয়ে আসতো। নিজেকে নজরুলের পিএস পরিচয় দিতো। গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় র্যাব।