সিন্ডিকেট ভাঙতে ঢাকা কাস্টম হাউসে ‘ই-অকশান’ চালু

বাংলাদেশের কাস্টমস ব্যবস্থায় যুক্ত হলো নতুন মাত্রা। দীর্ঘদিনের ম্যানুয়াল নিলাম পদ্ধতির অবসান ঘটিয়ে ঢাকা কাস্টম হাউস প্রথমবারের মতো চালু করেছে ই-অকশান (E-Auction)। এখন দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আগ্রহী ক্রেতারা অনলাইনে নিলামে অংশ নিতে পারবেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ই-অকশানে অংশ নিতে পারবেন। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস হাউস তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিস্তারিত নির্দেশনাও প্রকাশ করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমসের নিলাম প্রক্রিয়ায় প্রভাবশালী কিছু নিলামকারী ও ঠিকাদারের সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার অভিযোগ ছিল। তারা কম মূল্যে মূল্যবান পণ্য তুলে নিয়ে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করত। ই-অকশান চালুর মাধ্যমে সেই দুর্নীতির বলয় ভাঙতে উদ্যোগ নিয়েছে কাস্টমস। তবে এই রূপান্তর সহজ ছিল না। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থায় যেতে গিয়ে তাদের পড়তে হয়েছে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে—অভ্যন্তরীণ জটিলতা, লোকবল সংকট, দীর্ঘদিন জমে থাকা পণ্যের তথ্য না থাকা, উপযুক্ত প্রযুক্তির অভাব এবং প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতা। অনেক কর্মকর্তা পুরনো ব্যবস্থায় অভ্যস্ত ছিলেন, কেউ কেউ আবার লাভবান হতেন সেই অস্বচ্ছ পদ্ধতিতে। ফলে প্রযুক্তি চালুর পাশাপাশি ভেতরের প্রতিরোধও মোকাবিলা করতে হয়েছে।

কাস্টমস সংশ্লিষ্টদের মতে, ই-অকশান চালুর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। অনলাইন নিলাম ব্যবস্থায় অংশ নিতে এখন আর অফিসে গিয়ে ঘুরতে হবে না—বাড়িতে বসেই পণ্যের তালিকা দেখা, দরপত্র জমা দেওয়া এবং ফলাফল জানা যাবে। এতে সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি, দীর্ঘদিন পড়ে থাকা পণ্য দ্রুত নিষ্পত্তি হবে, কমবে জটিলতা। বিমানবন্দরে কাস্টোডিয়ানের জায়গা ব্যবস্থাপনায় স্বস্তি আসবে এবং গোডাউন ব্যবস্থায় ফিরবে শৃঙ্খলা।

এই বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জ কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং এটি একটি কাঠামোগত সংস্কার। এবার নিলামে হবে সত্যিকারের প্রতিযোগিতা।’ কাস্টমস হাউসের কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘ই-অকশান চালুর মাধ্যমে আমরা কাস্টমস ব্যবস্থায় একটি গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের যাত্রা শুরু করেছি। নিলাম প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান অস্বচ্ছতা, প্রভাবশালী মহলের দখলদারিত্ব এবং রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা রোধ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

এই বিষয়ে যুগ্ম কমিশনার নিতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘এখন দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ সমান সুযোগে নিলামে অংশ নিতে পারবেন, যা সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল নিলাম ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সর্বোপরি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। সেই লক্ষ্যেই আমরা ধারাবাহিকভাবে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!