কালোজিরার মধু : ১০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা

শরীয়তপুরে মৌ খামারিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কালোজিরার মধু আহরণ ও মৌবাক্সের পরিচর্যায়। ওষুধি গুণসম্পন্ন হওয়ায় এ মধুর বাজারমূল্য তুলনামূলক ভালো। জমির পাশে মৌবাক্স স্থাপনের ফলে ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে, যা কৃষক ও মৌ চাষিদের জন্য লাভজনক। উদ্যোক্তাদের মতে, যদি মৌ খামারি ও কৃষি অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো যায়, তাহলে জেলা থেকে বছরে ১০০ কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করা সম্ভব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, শরীয়তপুর জেলা কলোজিরা চাষের জন্য বিখ্যাত। জেলার ৬টি উপজেলায় কম-বেশি কালোজিরা চাষ হয়। বর্তমানে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠে কালোজিরা চাষ করা হচ্ছে। কালোজিরার ফুলকে কেন্দ্র করে জমিগুলোর পাশেই বসানো হয়েছে মৌবাক্স। ফুলের পাপড়ি থেকে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছি। চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পরিচর্যা ও মধু আহরণে। চলতি মৌসুমে কালোজিরার মধু আহরণের জন্য ২ হাজার ১০টি মৌবাক্স বসানো হয়েছে। এ থেকে মধু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা আছে ৯ হাজার ৬৫০ কেজি। কালোজিরার মধু আহরণ ভালো হওয়ায়, তুলনামূলক দাম বেশি পাওয়ায় খুশি বিভিন্ন জেলা থেকে আসা খামারি।

সরেজমিনে জানা যায়, জেলার জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের অন্তত ৮টি স্থানে চলছে কালোজিরার মধু আহরণ। এ ছাড়া জেলার সেনেরচড়, বড় গোপালপুর, পালেরচর, জয়নগর, বিলাশপুর, নড়িয়ার চাকধ এলাকায় আছে কালোজিরা চাষ ও মৌয়ালদের বিচরণ। এসব জায়গায় মধু আহরণের জন্য সাতক্ষীরা, মাগুরা, খুলনা, সিলেট, শেরপুর, দিনাজপুর, নাটোরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে খামারিরা এসে আস্তানা গাড়েন।

Tiro Bangla 87

জাজিরার কয়েকটি মৌ-খামারে দেখা যায়, কালোজিরা ক্ষেতের পাশে সারি সারি মৌবাক্স বসানো হয়েছে। শ্রমিক মৌমাছিরা মধু আহরণ করে বাক্সগুলোর ছিদ্রপথ দিয়ে ঢুকছে জমা করার জন্য। জমা করে আবার বের হয়ে যাচ্ছে মধু সংগ্রহ করার জন্য। তারা বিরামহীনভাবে চালাচ্ছে তাদের এ কর্মযজ্ঞ। মৌচাষিরাও ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে বাক্সগুলোর দেখাশোনা করছেন। প্রত্যেকটি খামারে ১৫০টি থেকে ২০০টি মৌবাক্স আছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে শরীয়তপুরের জাজিরার টিঅ্যান্ডটি এলাকায় কালোজিরার মধু সংগ্রহে এসেছেন খামারি তরুণ কুমার মন্ডল। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় মধু সংগ্রহের কাজ করছেন। কালোজিরার মৌসুম এলেই শরীয়তপুরে আসেন, কারণ এখানকার মধুর গুণগত মান ভালো এবং দামও বেশি।তিনি জানান, শরীয়তপুর কালোজিরার জন্য বিখ্যাত, এখানকার মধুর চাহিদা অনেক বেশি। প্রতি মৌসুমে এখানে আসি, এবার তিনজন এসেছি। আমি ১৫০টি বাক্স বসিয়েছি, প্রতিদিন প্রায় ১০ কেজি মধু সংগ্রহ করি। বাজারে এ মধুর দাম হাজার টাকা কেজি, ফলে আমরা ভালো লাভ করছি।

ফরিদপুর থেকে আসা মধু সংগ্রহকারী শাহাবুল ইসলাম শিহাব বলেন, ‘এ অঞ্চলে কালোজিরা চাষ বেশি হওয়ায় বেশি মধু পাওয়া যায়। অন্য মধুর চাইতে কালোজিরার মধু উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে পারি। তাই প্রতি মৌসুমে শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকায় মৌবাক্স স্থাপন করি। কালোজিরার মধু সংগ্রহ শেষ হলে দিনাজপুরে লিচু ফুলের মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবো।’

মৌমাছির আনাগোনায় আগের চেয়ে ভালো ফলন হচ্ছে জানিয়ে স্থানীয় কৃষকরা বলেন, ‘আজ থেকে ২০ বছর আগে এভাবে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করতে দেখিনি। মৌ খামারিরা প্রথম প্রথম বাক্স নিয়ে এলে আমরা ভেবেছিলাম মৌমাছি ফুলে বসলে ফসলের ক্ষতি হবে। এখন দেখি আমাদের ক্ষতি হয় না। ফসল ভালো হয়। তাই মৌ খামারিরা এলাকায় এলে তাদের নিরাপদে বসার ব্যবস্থা করে দিই।’

কালোজিরার মধুকে জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষি অফিস ও খামারিদের সমন্বয় ঘটানো গেলে জেলা থেকে অন্তত ১০০ কোটি টাকায় মধু উৎপাদন সম্ভব বলে জানিয়েছেন মধু আহরণকারী প্রতিষ্ঠান হাজকা এগ্রো ফার্মের মালিক শাহিদুল ইসলাম।

Tiro Bangla 88

শাহিদুল বলেন, ‘শরীয়তপুরে উৎপাদিত কালোজিরার মধুতে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এ জন্য চিকিৎসকেরা এ মধু খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। এখানকার মধুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় বহির্বিশ্বেও রপ্তানি সম্ভব। এ ছাড়া খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বয় ঘটানো গেলে অন্তত ১০০ কোটি টাকার মধু আহরণ সম্ভব।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন জানান, শরীয়তপুরে কালোজিরা থেকে ভালো মানের মধু আহরণ হয়। কৃষকদের উৎসাহিত করতে মৌয়ালদের ফসলি জমির পাশে মৌবাক্স বসানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা ফলন বৃদ্ধিতেও সহায়ক।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!