‘কর দিয়ে কেউ দেউলিয়া হয় না’

এনবিআর চেয়ারম্যান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, কর দিয়ে কেউ দেউলিয়া হয় না। কর দিয়ে দেউলিয়া হয়েছে এমন কথা কখনো শুনি নাই। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

কর অব্যাহতি নিয়ে এক প্রস্তাবের বিপরীতে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, নতুন করে কর অব্যাহতির কথা কেউ বলবেন না। আমরা চাই যতটুকু আছে তাও কমিয়ে আনা, ধীরে ধীরে কর অব্যাহতি তুলে দেওয়া। সৈয়দ মুজতবা বলেছেন- বই কিনে দেউলিয়া হয় না। আমি বলব কর দিয়ে দেউলিয়া হয়েছে বলে শুনি নাই। কর তো আয়ের ওপর, ব্যয়ের ওপর নয়। তাহলে দিতে সমস্যা কোথায়।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় পেশাজীবী সংগঠন আইসিএমএবি সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন আইসিএবি সভাপতি মারিয়া হাওলাদার স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন। এছাড়া আইসিএসবি, বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ভ্যাট প্রফেশনাল ফোরাম উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনায় জমির মৌজা মূল্য হালনাগাদকরণ প্রসঙ্গে আইসিএবির পক্ষ থেকে স্নেহাশিস বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে ভূমির ও ফ্ল্যাটের বাজার মূল্যের তুলনায় মৌজা মূল্য কম হওয়ায় অপ্রদর্শিত অর্থের সৃষ্টি হচ্ছে। জমির ফ্ল্যাটের মৌজা মূল্য সময় সময় হালনাগাদপূর্বক ডাটাবেজ তৈরি করা দরকার। এর মাধ্যমে এনবিআরের রাজস্ব হ্রাস এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি বলেন, মৌজা মূল্য হালনাগাদকৃত না থাকায় বিক্রয়কারীর সম্পদের প্রকৃত মূল্য প্রদর্শিত হচ্ছে না। ফলে উক্ত অপ্রদর্শিত সম্পদ ও সেটা থেকে অর্জিত আয় প্রতিফলিত হচ্ছে না। অপরদিকে অনেকাংশেই উক্ত নিম্ন মৌজামূল্যের ফলশ্রুতিতে ক্রেতাদের প্রকৃত আয়ের উৎস আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত হচ্ছে না। ফলে এনবিআর সারচার্জসহ অন্যান্য রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রস্তাবের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, জমির প্রকৃত মূল্য মৌজায় নিয়ে আসার পক্ষে। তবে সমস্যা হচ্ছে জমি রেজিস্ট্রেশন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। আমার কর ব্যাপকহারে কমাতে চাই। ধীরে ধীরে এটা ন্যূনতম করতে চাই, সমস্যা হচ্ছে রাজস্ব আদায়ের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কি করবে। আমাদের কাজ আমরা করব।বিদেশি প্রতিষ্ঠান দেশে ব্যবসা পরিচালনা করলেও অফিস না থাকায় তারা কর দিতে চায় না বলে জানান স্নেহশীষ বড়ুয়া। তিনি বলেন, বিদেশি বিভিন্ন প্রজেক্টের প্রযোজ্য কর সরকারে ওপর দায় চাপানো হয়। এখানে বড় ধরনের কর ফাঁকি হয়।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যারা চুক্তি তৈরি করে তাদের বিবেচনা করা উচিত। বিদেশি প্রজেক্টগুলোতে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট। এটা সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অথচ যারা কাজ করছে তাদের দেওয়া উচিত।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, করদাতার রিটার্নে সব সম্পদ প্রতিফলিত হয় তা নিশ্চিত করতে, ইটিআইএন অবশ্যই বিআরটিএ, ভূমি রেকর্ড অফিস এবং সিটি কর্পোরেশনের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে। এই ধরনের অটোমেশন সম্ভাব্য ট্যাক্স দাখিলকারীদের ট্যাক্স জালের আওতায় আনা নিশ্চিত করবে এবং তাদের কোনো ঝামেলা ছাড়াই অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে উৎসাহিত করবে। উপরন্তু এই ধরনের অটোমেশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে করদাতা তাদের বকেয়া ট্যাক্স ক্রেডিট পেতে কোন অসুবিধার সম্মুখীন হবে না।

আইসিএবি বলছে, আইসিএবি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে ডিভিএস সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এতে করে খাতভিত্তিক মুনাফা, সেলস নির্ণয় করা সম্ভব। যার ভিত্তিতে যৌক্তিক উৎসে করের হার নির্ধারণ করা সম্ভব। বর্তমানে বহু ধারায় উৎসে কর আরোপের বিধান আছে। এর ভিতর কিছু কিছু খাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব উল্লেখযোগ্য নয়। করদাতাদের ওপর এরূপ বিপুলসংখ্যক উৎসে করের পরিপালন ও হিসাব রক্ষণ করা দুরূহ।

অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও এত বিপুল সংখ্যক খাতের কর কর্তন মনিটরিং করতে অসুবিধায় পড়ছে। হিসাবরক্ষণের মানোন্নয়নের নতুন বিধানাবলির পরিপ্রেক্ষিতে আয় সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ফলে রাজস্বের জন্য উৎসে। করের প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। এ অবস্থায়, উৎসে কর কর্তনের খাতের সংখ্যা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা যেতে পারে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!