কর কর্মকর্তারা ৪৫% কোম্পানি থেকে ঘুষ চেয়েছিলেন

২০২২-২৩ অর্থবছর

** জরিপে আরও উঠে এসেছে, কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর প্রদানের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করেছিলেন

প্রায় ৪৫ শতাংশ কোম্পানি জানিয়েছে যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর কর্মকর্তারা তাদের কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন- এমনটাই উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে। জরিপে আরও উঠে এসেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর প্রদানের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার থেকে নিরুৎসাহিত করেছেন। কারণ ‘এ ব্যবস্থাগুলো কর এড়ানো ও ঘুষ নেওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেয়’। সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর সিপিডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

CPD

‘করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স রিফর্ম ফর গ্র্যাজুয়েটিং বাংলাদেশ: দ্য জাস্টিস পারস্পেকটিভ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের জরিপ অনুযায়ী, যেসব কোম্পানির ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ তাদের সম্পূর্ণ কর রিটার্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে জমা দিয়েছে। ‘কর্পোরেট ইনকাম ট্যাক্স রিফর্ম ফর গ্র্যাজুয়েটিং বাংলাদেশ: দ্য জাস্টিস পার্সপেক্টিভ” শীর্ষক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে সিপিডি। এ উপলক্ষে আজ সোমবার ঢাকার ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সিপিডি জানিয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১২৩টি কোম্পানির ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। জরিপের ফলাফলে কর ফাঁকির কারণ হিসেবে উচ্চ কর হার, জটিল আইন, কর ব্যবস্থার মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। অসৎ কর্মকর্তাদের ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করার পাশাপাশি সিপিডি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি এবং অবৈধ লেনদেন রোধে এনবিআর ভবনের কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের সুপারিশ করেছে। সিপিডি আরও সুপারিশ করেছে যে সরকারকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেমন স্বাধীন তদারকি, নিয়মিত নিরীক্ষা এবং স্পষ্ট প্রতিবেদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

মূল উপস্থাপনায় সিপিডির সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট তামিম আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে কর্পোরেট ট্যাক্স জিডিপির ৬ শতাংশ, উন্নত দেশগুলোতে এ হার ১৫ শতাংশ। এটা আন্ডার রিপোর্টিংয়ের কারণেও হতে পারে। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত কর্পোরেট ট্যাক্সকে নামিয়ে আনা। তাহলে কর্পোরেট ট্যাক্স যে ৩১ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশের মধ্যে আছে, সেটা ২৩ শতাংশে নামিয়ে এনেও লক্ষ্যপূরণ করা সম্ভব।’

যেসব কোম্পানি ট্যাক্স দিচ্ছে না তাদের চিহ্নিত করতে হবে। রিটার্ন না দেয়া একটি অপরাধ হিসেবে দেখার পরারমর্শ দেয়া হয় সিপিডির মূল উপস্থাপনায়। এতে বলা হয়, এটা করা গেলে ট্যাক্স দেয়া বৃদ্ধি পাবে। কোনো প্রতিষ্ঠান লোকসান দিলে রিটার্নে সেটাই লিখবে, রাজস্ব দেবে না। মুনাফা করলে সেটাই লিখবে, রাজস্ব দেবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস বিলের ক্ষেত্রে প্রথমে লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর বিল খেলাপির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। রিটার্ন না দেয়ার ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা করা যেতে পারি, যাতে সবাই রিটার্ন দেয়।

তামিম আহমেদ আরও বলেন, ‘বর্তমান দুই লাখ ৮৮ হাজার কোম্পানির মধ্যে ৯ শতাংশ রিটার্ন দেয়। এটি ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ৫৯ শতাংশ করা যেতে পারে। এটা করতে পারলে ২০২৯ সালে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বন্ধ হবে, তখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এই বর্ধিতসংখ্যক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে।’

আরও বলা হয়, রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। সবার আগে দুর্নীতি দূর করার পরামর্শ দেয়া হয় সিপিডির উপস্থাপনায়। বলা হয়, দুর্নীতি দূর না করা হলে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না বরং সমস্যা আরও বাড়বে। অটোমেশনের পথে ঘুষ অন্যতম প্রধান বাধা এমন তথ্য উঠে আসে সিপিডির গবেষণায়। যেসব কোম্পানি ট্যাক্স রিটার্ন দেয় তাদের ৪৫ শতাংশই বলছে, ঘুষ দিতে হয়। সংস্কার করতে হলে আগে এই দুর্নীতি দূর করতে হবে। আবার রিটার্ন দেয়ার ক্ষেত্রে দুই পক্ষই ম্যানুয়ালি দিতে চায়। রাজস্ব বোর্ডের লোকজন ঘুষ নিয়ে রিটার্ন দেয়া পছন্দ করেন, আবার ব্যবসায়ীরা ঘুষ দিয়ে কম রাজস্ব দিতে পছন্দ করেন।

** ২০২৩ সালে ২.২৬ লাখ কোটি টাকার কর ফাঁকি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!