কর কমানো নিয়ে এনবিআর-বাপার বৈঠক ব্যর্থ

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে নতুন ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে দ্বিতীয় দফার বৈঠক করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।

আজ বৃহস্পতিবার(৬ ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব ভবনে দ্বিতীয় দফা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাপা নেতারা। সেখানে সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরীকে উদ্দেশ করে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “আপনাকে হতাশ দেখাচ্ছে, বৈঠক কি ফলপ্রসু হয়েছে?” জবাবে তিনি বলেন, “অনেস্টলি বলছি, মিটিংটা ফলপ্রসূ হয়নি। উনারা (এনবিআর) আমাদের কাছে থেকে সময় নিচ্ছেন। উনারা বাজেটের কথা বলছেন।“আমরা কাজ করে যাব, হয়ত আমাদের আরও বেশি সহনশীল হতে হবে; সহনীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। অবশ্যই মনে দুঃখ লাগে, যখন পণ্যের দাম ভোক্তার জন্য বাড়াতে হয়।”

শতাধিক পণ্য ও সেবায় কর বাড়িয়ে গত ৯ জানুয়ারি দুটি আদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। বিস্কুট, ওষুধ, পোশাক, মিষ্টি, কয়েক ধরনের টিস্যু, মোটর গাড়ির গ্যারেজ, এলপি গ্যাসের মত পণ্য কিংবা সেবাও রয়েছে তালিকায়।এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের অতিরিক্ত কর প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২৩ জানুয়ারি এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করে বাপা।সেদিন বৈঠক থেকে বেরিয়ে আহসান খান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, তাদের দাবির বিষয়ে এনবিআর ‘ইতিবাচক’ সাড়া দিয়েছে।

দ্বিতীয় দফার বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান ছাড়াও সদস্য আবদুর রউফ (মূসক নীতি) ও দ্বিতীয় সচিব (মূসক) বদরুজ্জামান মুন্সী উপস্থিত ছিলেন।

আহসান খান চৌধুরী বলেন, “আমার মনে হয় রেগুলেটরদের ভালো করে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি না; আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমতো। ফুড আইটেমের ওপর অবশ্যই ভ্যাট ও সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি বাড়ানো যৌক্তিক নয়।তিনি বলেন,এনবিআর চেয়ারম্যানকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেছি। আমরা লোকসানের মুখে পড়েও পুরনো দামে পণ্য বিক্রি করছি। যদিও ভ্যাটের বোঝা বেড়েছে।ব্যবসায়ীদের তরফে এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করা হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন,যদি ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে প্রক্রিয়াজাত পণ্যের চাহিদা কমে যাবে।দাবি না মানলে ব্যবসায়ীরা কী করবে জানতে চাইলে তার ভাষ্য, “কর্মসূচি দেওয়া; আন্দোলন করা আমাদের সাজে না। বারবার আমাদের কষ্টের কথা মানুষের সামনে উপস্থাপন করব।ব্যবসায় যদি মুনাফা থাকে তাহলে ব্যবসা চালাব। মুনাফা যদি কম হয়, বাংলাদেশে অন্য ব্যবসা আছে। আমরা অন্য ব্যবসার দিকে যাব।

বাপার সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, “ফিনিশড প্রোডাক্টের পর যখন ট্যাক্স বাড়বে; অবধারিতভাবে দাম বাড়বে। দাম বাড়লে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের সেল কমে যায়, আমরা ট্যাক্স কম দিতে বাধ্য হই। শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হই।“পুরো অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব পড়ে; পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা চেয়ারম্যানকে বুঝিয়েছি। আশা করি আমরা ভালো একটা সিদ্ধান্ত ওনার কাছ থেকে পাব।”তিনি বলেন,কয়েক দিনের মধ্যে যদি সমাধান না হয়, তাহলে আমরা পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হব। আর কতদিন লোকসান দিব?

বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভুইয়া বলেন, “আমরা এনবিআরকে বারবার বিরক্ত করার চেষ্টা করছি। চেয়ারম্যানকে বললাম,‘আপনার কাছ থেকে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি’(আগের বৈঠকে)। কিন্তু কার্যকারিতা বাস্তবে দেখতে না পেরে আমরা আপনাকে আবার বিরক্ত করার জন্য এসেছি।”তিনি আরও বলেন,ভ্যাটের সদস্য আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, তিন-চারটা দিন চুপচাপ থাকেন; আমাদের কাজ করতে দেন; আমরা রেজাল্ট দিব।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আকিজ ভেঞ্চারের চেয়ারম্যান শেখ শামিম উদ্দিন ও এসএমসি এন্টারপ্রাইজের এমডি সাইফ নাসির উপস্থিত ছিলেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!