** বরগুনার ব্যবসায়ীদের কর আদায়ের চিঠি দিয়ে ৫-১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন প্রীতিশ
** ডিসিটি প্রীতিশ বিশ্বাসের পর বিভাগীয় কর্মকর্তা ডিসিটি লিংকন রায় কমিশনারের নাম করে ঘুষ দাবি করেন
কর কমাতে হলে উপকর কমিশনারকে (ডিসিটি) দিতে হবে ২৫ লাখ টাকা। আর কর অফিসকে দিতে হবে ২৫ লাখ টাকা। টাকা না দিলে যেভাবে মামলা হয়েছে, সেভাবে টাকা দিতে হবে। বরগুনা উপকর কমিশনারের কার্যালয়ের উপকর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বরগুনার এক ব্যবসায়ীর কাছে ঘুষ দাবির এমন অভিযোগ। আর এই ঘুষ কালেক্টর হিসেবে কাজ করেন কর পরিদর্শক উজ্জ্বল। উজ্জ্বলের দাবি, প্রীতিশ একইভাবে চিঠি দিয়ে বরগুনার ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে কর সুবিধা দিয়ে ৫ লাখ ১০ লাখ, সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। প্রীতিশের ঘুষ দাবির অভিযোগ দেওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ওই ব্যবসায়ী। এবার কর কমিশনারের (বরিশাল) দোহাই দিয়ে একইভাবে ওই ব্যবসায়ীর কাছে ঘুষ দাবি করেন বিভাগীয় কর্মকর্তা উপকর কমিশনার লিংকন রায়। ‘কর সুবিধা বা করছাড়’ দিতে ঘুষ চেয়ে না পাওয়ার হয়রানির এমন অভিযোগ করেছেন বরগুনা ব্যবসায়ী ও সাবেক পৌর মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন। শনিবার (১৮ আগস্ট) বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
শাহাদাত হোসেন জানান, আমি বরগুনায় আল-মামুন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের মাধ্যমে ঠিকাদারি ব্যবসা করি। ঠিকাদারি কাজের জন্য পাথরঘাটার বাইনচটকী গ্রামে ওয়াপদার বেড়িবাঁধের বাইরে অনাবাদি জমিতে দুইটি কোম্পানির নামে ব্রিকফিল্ড চালিয়ে ইট এবং খোলাবাজার হইতে রড, সিমেন্ট ও অন্যান্য মালামাল ক্রয় করে মালামালগুলো পরিবহনের জন্য ১৪টি খোলা ট্রাক ২৪ মাসের কিস্তিতে এবং দুইটি ট্রলার ক্রয় করে ঠিকাদারি কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছি। কোম্পানি যে অর্থবছরে নিবন্ধিত হয়েছে, সেই অর্থবছর থেকে প্রতি বছর আমাদের প্রতিষ্ঠান আইন মোতাবেক আয়কর রিটার্ন দাখিল করে আসছে; যা সংশ্লিষ্ট আয়কর অফিস গ্রহণ করে দীর্ঘদিন যাবৎ নিয়মিতভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠান হতে দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের নিকট আয়কর বাবদ কোন অর্থ পাওনা নেই মর্মে প্রতি অর্থবছরে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত ২১ এপ্রিল বরগুনা উপকর কমিশনারের কার্যালয়, সার্কেল-১৫, কর অঞ্চল বরিশাল থেকে জানানো হয় ২০১৯-২০ হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত আমাদের প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির রিটার্ন সঠিকভাবে দাখিল করা হয়নি। যার ব্যাখ্যা ২৯ এপ্রিল দাখিল করতে বলা হয়। অন্যথায় আয়কর আইন, ২০২৩ এর ২১২ ধারা অনুযায়ী আয়কর মামলা করবর্ষ ২০১৯-২০ হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত পুনঃ উন্মোচন করা হবে। চিঠি পেয়ে আমি এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য পরিচালকরা নির্ধারিত তারিখে আলাদা আলাদাভাবে ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য তিন মাস সময় চেয়ে আবেদন করি; যা উপকর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাস নিজে করে রাখেন। ওই দিনই তার অফিসের উজ্জ্বল নামের এক কর পরিদর্শক আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসেন। উজ্জ্বল আমাদের কোম্পানির ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মো. লুৎফর রহমান, হিসাবরক্ষক মাহবুবুল আলমের উপস্থিতিতে উপকর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাসের বরাত দিয়ে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।
উদাহরণ দিয়ে ব্যবসায়ী বলেন, যেমন আমাদের বরাদ্দকৃত কাজগুলোতে ব্যবসার পরিমাণ সামান্য। তার মধ্যে কর্মচারির বেতনসহ সাইট ওভারহেড খরচ অনেক বেশি। অথচ আমাদের বিল হতে যথা নিয়মে সরকার আয়কর কর্তন করে রাখে। সেক্ষেত্রে একমাত্র খোলাবাজার দিয়ে মালামাল ক্রয় করে সীমিত ব্যবসা করি; যা ব্যাংকের সুদ পরিশোধ করে আমাদের সামান্য কিছু ব্যবসা থাকে। যেহেতু আমি প্রীতিশ বিশ্বাসকে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ প্রদান করতে রাজি হইনি। সেহেতু নীতিশ সুকৌশলে বিভাগীয় উপকর কমিশনার লিংকন রায়কে আমার পেছনে লাগিয়ে দেন। তিনি লিংকন রায়কে আমার বিরুদ্ধে প্রভাবিত করে খেপিয়ে দেন।
লিংকন রায় তার কার্যালয় ১০ জুন ২০২১-২২ করবর্ষের আয়কর মামলা শুনানির জন্য ২৩ জুন নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত তারিখে আমাদের আইনজীবী ও কোম্পানির ব্যবস্থাপক মো. লুৎফর রহমানের মাধ্যমে তাদের চাহিদা অনুযায়ী, যাবতীয় কাগজপত্রসহ কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক সই করা লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করি। সকল কাগজপত্র দাখিলের পর ‘উপকর কমিশনার লিংকন রায়’ আমাদের কোম্পানির ব্যবস্থাপক মো. লুৎফর রহমানকে ডেকে এই মর্মে হুঁশিয়ারি দেন যে, ‘বিষয়টি কমিশনার স্যার অবগত আছেন। সুতরাং কমিশনার স্যারসহ আমাদের অফিসে ৫০ লাখ টাকা দেওয়া না হলে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে না। যা আপনার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেনকে অবহিত করবেন।’
সাবেক এই মেয়র বলেন, ব্যবস্থাপক লুৎফর বিষয়টি আমাকে অবহিত করলে আমি লুৎফরকে বলি যে, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ নিয়মিতভাবে আমাদের সম্পদের চেয়েও বেশি কর দিয়েয় আসতেছি। ইতিপূর্বে আমি, আমার স্ত্রী মোসা. হেনারা বেগম, আমার মেয়ে মহাসিনা মিতু শ্রেষ্ঠ করদাতা নির্বাচিত হয়েছি। সুতরাং উনারা যেভাবেই ভয় দেখাক না কেন, আমাদের কিছুই করতে পারবেন না। প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও কর অফিস থেকে আমাদের বিষয়টি সুরাহা করেনি। পুনরায় হয়রানি তথা তাদের পুরানো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বরগুনা উপকর কমিশনারের কার্যালয় থেকে আমার, আমার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের নামে চিঠি ইস্যু করা হয়। যাতে বলা হয়, ২০২৩-২৪ করবর্ষে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১৮০ ধারায় দাখিল করা রির্টানগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়েছে, যার কারণ আমাদের অবহিত করা হয়।
এই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, প্রীতিশ বিশ্বাস বরগুনা যোগদান করার পরে সকল শ্রেণির ব্যবসায়ীদেরকে অযথা হয়রানি করে যাচ্ছেন। ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রীতিশ কখনো নিজের নামে আবার কখনো বরিশাল কর কমিশনারের নামে ঘুষ আদায় আদায় করেছেন বলে অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।
***