কর অঞ্চলে কর্মচারী নিয়োগে দুর্নাম-অনিয়মের যুগ শেষ হচ্ছে

** সব কর অঞ্চলের ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীদের শূন্য পদের তথ্য চাইবে গঠিত কমিটি
** শূন্য পদের সংখ্যা ও তথ্য যাচাই করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে পরীক্ষা নেয়া-সবই করবে কমিটি
** এই কমিটির সুপারিশ প্রাপ্ত কর্মচারীদের কর অঞ্চলকে দেওয়া হবে
** কেন্দ্রীয়ভাবে এনবিআর কর্মচারী নিয়োগ করার ফলে কর অঞ্চলসমূহের বহু বছরের কর্মচারী নিয়োগের দীর্ঘসূত্রিতা দূর হবে। একইসঙ্গে অনিয়ম, ঘুস, দুর্নীতির অভিযোগ ও সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে

কর অঞ্চলে কর্মচারী (১১-২০ গ্রেড) নিয়োগ মানে ঘুস, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পুরাতন কেচ্ছা। শতভাগ স্বচ্ছ নিয়োগ হলেও অভিযোগের শেষ নেই। আবার কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম করে বহু কর্মকর্তা শাস্তির মুখোমুখি তো হয়েছেন, অনেকে চাকরিও হারিয়েছেন। ফলে ভয়ে অনেক কর্মকর্তা কর অঞ্চলে কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া থাকতেও চান না। আবার কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। নিয়োগের ছাড়পত্র পেলে পযাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যায় না। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। আবার ছাড়পত্রের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে বরাদ্দের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যে নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তা বদলি হয়। আবার নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। নতুন নিয়োগ দিতে হলে আগে পুরাতন কর্মচারীদের পদোন্নতি দিতে হয়। সেখানে আবার বহু জটিলতা। পযাপ্ত কর্মচারী বা জনবল না থাকায় প্রতিটি কর অঞ্চলের করসেবা ও রাজস্ব আদায়ে বিঘ্ন ঘটছে।

কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ার জটিলতা নিরসনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবার যুগান্তরকারী এক পদক্ষেপ নিয়েছে। তাহলো-সব কর অঞ্চলের ১১ হতে ২০ গ্রেডের কর্মচারী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়োগে চূড়ান্ত সুপারিশ করা-সবই এনবিআর থেকে করা হবে। সেজন্য এনবিআরে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) এনবিআরের আয়কর অনুবিভাগের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) কে সভাপতি ও প্রথম সচিব (কর প্রশাসন) কে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথম সচিব (কর প্রশাসন) মো. মোসাদ্দেক হুসেন সই করা এই সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।
NBR Stuff scaled
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বা সিনিয়র সচিব পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব বা সিনিয়র সচিব পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের উপপরিচালক বা সহকারী পরিচালক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি। কমিটিতে বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জিএম আবুল কালাম কায়কোবাদ।

অপরদিকে, কর্মচারী নিয়োগে এই ধরনের যুগান্তরকারী পদক্ষেপ নেয়ায় বিভিন্ন কর অঞ্চলের কর্মকর্তারা এনবিআরকে বিশেষ করে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, প্রতিটি কর অঞ্চলে বছরের পর বছর কর্মচারী নিয়োগ না হওয়ায় করসেবা ও কর আদায়ে সমস্যা হচ্ছে। নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতার জন্য কর্মকর্তারা নিয়োগ দিতে উৎসাহ পান না। এছাড়া অনিয়ম, ঘুস, দুর্নীতি, তদবির, সুপারিশের ভয় তো রয়েছে। নিয়োগ দিতে গিয়ে কর্মকর্তাদের করসেবা ও কর আহরণ বাদ দিয়ে অনেক লম্বা সময় ধরে নিয়োগের কাজ করতে হয়। কর অঞ্চলে পুরাতন কর্মচারীদের পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই জটিলতা তৈরি হয়। এছাড়া অনেক কর অঞ্চলে কর্মচারীদের কেউ কেউ মামলা করেন, যার ফলে নিয়োগ-পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হয় না। এনবিআর কেন্দ্রীয়ভাবে এই নিয়োগ দেওয়ায় নিয়োগে স্বচ্ছতা আসবে, দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন হবে। কর্মচারী নিয়োগের মতো পুরাতন কর্মচারীদের পদোন্নতিও এনবিআর থেকে করার সুপারিশ করেছেন অনেক কর্মকর্তা।

অপরদিকে, আদেশে বলা হয়েছে, এনবিআরের আয়কর অনুবিভাগের অধীনস্থ সকল কর অঞ্চলের গ্রেড-১১ হতে গ্রেড-২০ পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে শুরু করে সমগ্র প্রক্রিয়া সম্পন্নপূর্বক নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!