** অভিযুক্ত করদাতা কোম্পানি হলো পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘ধামশুর ইকোনমিক জোন লিমিটেড’
** ২০২০-২১ করবর্ষের প্রায় ৭২ কোটি টাকা কর নির্ধারণীর মামলায় কর হয়ে যায় শূন্য
** ২০২১-২২ করবর্ষের প্রায় ৭৩ কোটি টাকা কর নির্ধারণীর মামলায় কর হয়ে যায় ১২৯৯ টাকা
** সার্কেলের এক উপকর কমিশনার কর নির্ধারণ করেন, অপর উপকর কমিশনার দায়িত্ব নেয়ার পর ১৪৬ কোটি টাকার কর বদলে যায়
** ১৪৬ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি ঢাকতে কর নির্ধারণের মূল নথি গায়েব করে ফেলা হয়েছে
একটি করদাতা কোম্পানি। ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ করবর্ষে উপকর কমিশনার দুইটি মামলা করলেন। যার বিপরীতে কর নির্ধারণ করলেন প্রায় ৭২ কোটি টাকা ও প্রায় ৭৩ কোটি টাকাসহ মোট প্রায় ১৪৬ কোটি টাকা। উপকর কমিশনার ওই সার্কেল থেকে বদলি হলেন। মামলা দুইটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে অডিটের জন্য নির্বাচিত হলেন। নতুন উপকর কমিশনার সার্কেলে বদলি হয়ে আসলেন। আসার সঙ্গে সঙ্গে কর হয়ে গেলো ৭২ কোটি টাকার জায়গায় শূন্য আর ৭৩ কোটি টাকার জায়গায় ১২৯৯ টাকা। শুধু অবিশ্বাস গতিতে আলাউদিনের চেরাগের ছোঁয়ায় কর-ই কমলো না, দুইটি মামলার নথিও গায়েব হয়ে গেলো!
এমন তুঘলিক কাণ্ড ঘটেছে কর অঞ্চল-৫, ঢাকার একটি সার্কেলে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে কর শূন্য ও নথি গায়েবের প্রমাণ মিলেছে। বুধবার (৯ জুলাই) দুদকের একটি টিম কর অঞ্চল-৫, ঢাকার সার্কেল-৯০ (কোম্পানি) অভিযান পরিচালনা করেছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। করদাতাকে বাঁচাতে অবৈধ বিনিময়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ১৪৬ কোটি ক্ষতি করা হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন কর্মকর্তারা।
এনবিআর সূত্রমতে, দুদক অভিযুক্ত করদাতা কোম্পানির নাম প্রকাশ করেনি। তবে বিজনেস বার্তার পক্ষ থেকে কোম্পানির নাম অনুসন্ধান করা হয়েছে। অনুসন্ধান অনুযায়ী, করদাতা কোম্পানি হলো ‘ধামশুর ইকোনমিক জোন লিমিটেড’। এটি আবাসন, হোটেল এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যবসা পরিচালনাকারী ও পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। পাঁচ তারকা হোটেল লো মেরিডিয়ানের মালিকানায় রয়েছে।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, একটি করদাতা কোম্পানির আয়কর নথি গায়েব করে সরকারের ১৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগে ঢাকার কর অঞ্চল-৫, সার্কেল-৯০ (কোম্পানি) অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুদক। বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম ওই অভিযান পরিচালনা করে।
সূত্র আরও জানায়, অভিযানকালে ১৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা কম কর নির্ধারণী আদেশের মূল ফাইলগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে গায়েব করা হয়েছে মর্মে টিমের সদস্যদের কাছে প্রতীয়মান হয়। অভিযানকালে অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২-২৩ করবর্ষের মাসিক কর নির্ধারণ রেজিস্ট্রার ৪-এর পৃষ্ঠা নম্বর ৩-এর ৪৪ ও ৪৫ নম্বর ক্রমিকে ই-টিআইএনধারী একটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কর মওকুফ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
আরও দেখা যায়, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ করবর্ষের দুটি মামলার বিপরীতে কর্তৃপক্ষের নির্ণয় করা আয়ের বিপরীতে কর দাবির পরিমাণ ছিলো ৭২ কোটি ৯৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬২ টাকা ও ৭৩ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার ৯৯০ টাকাসহ মোট ১৪৬ কোটি ৫৭ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরে মামলা দুটি এনবিআর অডিটের জন্য নির্বাচিত করে। এর মধ্যে কর নির্ধারণ করা সার্কেল কর্মকর্তা উপকর কমিশনার বদলি হয়ে যায়। নতুন কর্মকর্তা উপকর কমিশনার ওই সার্কেলে যোগদান করেন। পরে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নথিতে রক্ষিত কর নির্ধারণী আদেশ অনুযায়ী কর মামলা দুটিতে করদাবির পরিমাণ নির্ধারণ করেন যথাক্রমে শূন্য টাকা ও ১ হাজার ২৯৯ টাকা, যা অস্বাভাবিক। অর্থাৎ ওই কোম্পানির ২০২০-২১ করবর্ষের ৭২ কোটি ৯৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬২ টাকার নির্ধারণ করা হয়ে যায় শূন্য। আর ২০২১-২২ করবর্ষে নির্ধারণ করা কর ৭৩ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার ৯৯০ টাকা হয়ে যায় ১ হাজার ২৯৯ টাকা।
সূত্র আরও জানিয়েছে, অভিযানকালে মোট ১৪৬ কোটি ৫৭ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫৩ টাকা কম কর নির্ধারণকারী কর্মকর্তার কর নির্ধারণী আদেশের সংশ্লিষ্ট মূল ফাইলগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি। উদ্দেশ্যমূলকভাবে বা অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ থাকায় এসব নথি গায়েব করা হয়েছে মর্মে টিমের নিকট প্রতীয়মান হয়। প্রাপ্ত ব্যাপক অনিয়মের এ তথ্যাবলির আলোকে কমিশনের পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য প্রতিবেদন দাখিল করবেন দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানির নাম হলো ধামশুর ইকোনমিক জোন লিমিটেড। এটি আবাসন প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড পাঁচ তারকা হোটেল লো মেরিডিয়ানের মালিকানায় রয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বেস্ট হোল্ডিংস ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ধামশুর ইকোনোমিক জোনের মোট আয়তন আনুমানিক ৮৪৬ একর। এটি ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত। চলতি বছরের জুলাই নাগাদ এই শিল্পাঞ্চলের উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত এবং শিল্প-প্লট লিজ দেওয়া শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড একটি বেসরকারি কোম্পানি যারা বিভিন্ন খাতে ব্যবসা পরিচালনা করে, যার মধ্যে আবাসন, হোটেল এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল উল্লেখযোগ্য। কোম্পানিটি বর্তমানে তিনটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করছে। যার মধ্যে রয়েছে-যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল হোটেল চেইন ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল এর ব্র্যান্ড লো মেরিডিয়ান, ম্যারিয়ট এবং প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড দ্যা লাক্সারি কালেকশন রিসোর্ট।
অন্যদিকে, বুধবার এনবিআরের অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর মওকুফ করে সরকারের রাজস্ব ক্ষতিসাধন এবং জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে দুদক। অভিযানকালে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে এনফোর্সমেন্ট টিম মোহাম্মদপুরের সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসকে দলিল যাচাইয়ের জন্য অনুরোধ করে। পরবর্তী সময়ে ভূমি অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য মোহাম্মদপুরের এলাকা পরিদর্শন করা হয়। শিগগিরই রেকর্ডপত্র পূর্ণাঙ্গরূপে পর্যালোচনা করে এনফোর্সমেন্ট টিম প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে দুদক জানিয়েছে।
** ১২৩৮ কোটি টাকা ক্ষতি: বেস্ট হোল্ডিংসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান
** প্রতীক গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে চাকরি হারালেন দুই কর্মকর্তা
** ‘একজন প্রবাসী শ্রমিক ৭৩১ কোটি টাকা এনে বলছেন এটা করমুক্ত’
** প্রতীক গ্রুপের ফারুকী-ই ৭৩১ কোটির সেই ব্যক্তি
** কর পরিদর্শক সাইফুল: ১৮ বছরে বৈধ আয় ৪৩ লাখ, মালিক অর্ধ-শত কোটি টাকার