বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার কিছু পর। হঠাৎ আগারগাঁও এনবিআর ভবনে প্রবেশ করেন একদল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিছুক্ষণ পর এনবিআরের প্রবেশের দুইটি গেইট বন্ধ করে তালা মেরে দেওয়া হয়। এতে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাপ্রার্থী-কেউ এনবিআরের প্রবেশ করতে পারেনি। একইসঙ্গে ভেতর থেকেও কেউ বাইরে যেতে পারেনি। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকতে উত্তেজনা। বিক্ষোভ-বাকবিতণ্ডা। প্রায় সারাদিন চলে এই অবস্থা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গেইটের সামনে বসে আন্দোলন চালিয়ে যায়।
তবে বিকেল চারটার পর এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, অচলাবস্থা নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আজ সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক বা আলোচনার কোনো চিঠি তাঁরা পাননি। তাঁরা আলোচনা ও এনবিআর সংস্কারের পক্ষে। এই অচলাবস্থা নিরসনে তারা চেয়ারম্যানকে অপসারণের এক দফা দাবিতে অনড়। তাঁরা সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অপরদিকে, সরকারও এনবিআরের মতো রাজস্ব আহরণ ও সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের অচলাবস্থা নিরসনে হার্ডলাইনে গিয়েছে। যার ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছে। যদিও বিকেল সোয়া ৫টার পর আরো বেশি সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এনবিআর ভবনে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, ‘আজকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে এনবিআরের তিনটি গেইট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এনবিআর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী আজ এনবিআরে ঢুকতে পারছে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এ বিষয়টি আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দমন-নিপীড়নের কথা মনে করিয়ে দেয়। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার যেমন দমন-নিপীড়ন করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে পারেনি। ঠিক তেমনি আমাদের উপর এহেন দমন নিপীড়ন করে আমাদের যৌক্তিক রাজস্ব সংস্কারের দাবিকে কেউ রুখতে পারবে না। এনবিআরের বিলুপ্তি রোধে আমাদের জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আমরা বিসর্জন দিতে রাজি আছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার একটি প্রশ্ন, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ৪৪ আমলার তালিকায় তিন নম্বরে থাকা বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানকে কোন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এখনো শেল্টার দিয়ে সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা পরাজিত শক্তিকে মদদ দিচ্ছে তা দ্রুত বের করা দরকার। তা না হলে দেশ ও রাষ্ট্র আজ সমূহ ঝুঁকির সম্মুখীন বলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে। আমাদের এক দফা দাবি- অনতিবিলম্বে বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ। চেয়ারম্যানের অপসারণের মধ্য দিয়েই সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের যাত্রার সূচনা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে-এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে আগামী ২৭ জুন শুক্রবারের মধ্যে অপসারণ না করা হলে আগামী ২৮ জুন শনিবার থেকে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। তবে, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতা বহির্ভূত থাকবে। ২৮ জুন থেকে সারাদেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তর থেকে এনবিআর অভিমুখে ‘মার্চ টু এনবিআর’ পালিত হবে। সার্বিক পরিস্থিতিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে, প্রধান উপদেষ্টার সানুগ্রহ হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অচলাবস্থার নিরসন হবে না। সেজন্য প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, ২৫ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, আমাদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। যাতে উল্লেখ করা হয়, ‘ইতোমধ্যে ২২ জুন হতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আবারো আন্দোলন শুরু হলে অর্থ উপদেষ্টা আগামী ২৬ জুন (আজ) বিকাল ৫টায় বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদেরকে তাঁর সাথে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।’ অর্থাৎ, আলোচনায় ডেকেছেন বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদেরকে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে হওয়া আন্দোলন বিষয়ে আলোচনা করতে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে নয়। অর্থাৎ, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে আলোচনায় না ডেকেও বলা হচ্ছে আলোচনায় ডাকা হয়েছে। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, কর্মসূচি পালনকারী এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কেবল ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন নয়-এটি ক্যাডার, নন-ক্যাডার থেকে শুরু করে মিনিস্টেরিয়াল, সিপাই, অফিস সহায়ক পর্যন্ত সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন। যেহেতু এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে আলোচনায় ডাকা হয়নি, তাদের কোনো প্রতিনিধিকে সেই আলোচনায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ রাখা হয়নি। সেহেতু এই আলোচনায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের অংশগ্রহণের বিষয়টিই বরং অবান্তর।