দেশের ছয় গ্রুপ অব কোম্পানি ও একটি কোম্পানিসহ নামি সাত কোম্পানির আয়কর ফাঁকি তদন্ত করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে এসব কোম্পানির লেনদেনের যাবতীয় তথ্য আনা হয়েছে। ফাঁকি উদ্ঘাটনের কাগজপত্র-যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত করার সময় এসব কোম্পানি যাতে শেয়ার হস্তান্তর না করতে পারে, সেজন্য রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের কার্যালয়কে (আরজেএসসি) চিঠি দিয়েছে সিআইসি। সম্প্রতি সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবীব সই করা এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে ‘আয়কর আইন, ২০২৩ এর অধীন ২২৩ ধারায় এসব কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর (ক্রয়, বিক্রয় ও দান) স্থগিত করার অনুরোধ’ জানানো হয়েছে। সাতটি কোম্পানি হলো-বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড (নগদ লি.)। চিঠিতে বলা হয়েছে, আইনের ২২৩ ধারার অধীন এনবিআর করফাঁকি রোধে সম্পত্তির অন্তবর্তীকালীন অবরুদ্ধকরণ বা ক্রোক এর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। চলমান তদন্ত অনুযায়ী, উল্লিখিত কোম্পানিসমূহের বিরুদ্ধে করফাঁকির অভিযোগসহ আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে, এর আগে ২০ আগস্ট দেশের দেশের ছয়টি শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য কর ফাঁকি অনুসন্ধানে নামে সিআইসি। এসব শিল্পগোষ্ঠী হলো–বেক্সিমকো, এস আলম, বসুন্ধরা, সামিট, নাসা এবং ওরিয়ন। এস আলম গ্রুপের সম্ভাব্য কর ফাঁকির বিষয়ে অনুসন্ধান আগে থেকে চলছিল। বুধবার (২০ আগস্ট) এনবিআরে এক বিশেষ বৈঠকে বাকি পাঁচ শিল্পগোষ্ঠীর বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সামিট গ্রুপ আলোচিত নাম। এর চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এ গ্রুপের আবাসন, ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে। ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যানের নাম ওবায়দুল করিম।
সূত্রে জানা গেছে, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের কর-সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ব্যাংক লেনদেনের তথ্য এবং কর নথিতে দেখানো সম্পদের পাশাপাশি বেনামি সম্পদও খোঁজা হচ্ছে। এর আগে সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করে কর অঞ্চল-১৫। এনবিআর জানিয়েছে, বিভিন্ন পন্থায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির বিশেষ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থার সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। সিআইসি বর্তমান সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনা এবং সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য কর ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা করেছে। তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সঞ্চয় অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রীসহ অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব ও স্থগিত করা হয়েছে।
***