ঢাকা উত্তর সিসি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক ভাবে কর প্রদান করেন না। ইউনাইটেড হাসপাতালের আছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা ট্যাক্স বকেয়া পড়ে আছে। তেমনি রেনেসাঁস হোটেল, ওয়েস্টিন হোটেল ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেও এমন পরিমান ট্যাক্স বকেয়া আছে। তারা সিটি কর্পোরেশন থেকে সর্বোচ্চ গ্রহণ করে অথচ ট্যাক্স প্রদান করে না এটা অনৈতিক। রোববার (১১ মে) ডিএনসিসির পৌরকর মেলা-২০২৫ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও যুক্ত করে বলেন, কর তালিকা থাকা এমন ব্যক্তিদের মধ্যে নূন্যতম এক লাখ টাকা কর বকেয়া আছে প্রায় পঁচিশ হাজার লোকের কাছে। কর তালিকার বাইরে আছে এর প্রায় পাচঁগুনের ও বেশি। মেলা পরবর্তী সময়ে আমরা কর তালিকায় সকল নাগরিকদের আনার জন্য এসেসমেন্টের জন্য লোক পাঠানো হবে। তাই, নাগরিকদের কাছে অনুরোধ আপনারা নিজেরা স্বপ্রোণদিত হয়ে কর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে পৌরকর প্রদান করেন। মেলায় আমরা ৭.৫ শতাংশ রিভেটের ব্যবস্থা রেখেছি। কোনো হয়রানি যেন না, সেজন্য অনলাইন প্রোটাল খোলা রাখা হয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স যেমন ঘরে বসে পাচ্ছেন তেমনি হোল্ডিং ট্যাক্স ও ঘরে বসে দেয়া যাবে। প্রশাসক বলেন, নাগরিকদের কর দেয়া দেশের প্রতি তাদের কর্তব্য। তাই সবাই কর প্রদান করুন। যাদের নিকট অনেক বেশি বকেয়া তাদেরকে অতিশিগ্রই ক্রোকের নোটিস প্রদান করা হবে।
প্রভাবশালী যারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ট্যাক্স দেন না, যাদের কাছে অনেক বকেয়া তারা এবার আর কোনো ছাড় পাবে না। তাই স্বপ্রোণদিত হয়ে তাদের ট্যাক্স প্রদান করেন না হলে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়া বিরক্ত করবে ও আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ এজাজ। এ সময় তিনি আরও বলেন, সাধারণ লোক কর দিতে চায় কিন্তু মানুষের ভ্রান্ত ধারণা আছে কর দেয়ার প্রক্রিয়া জটিল তাই তারা কর দিতে আসে না। এবার আমরা এই সমস্যার সমাধান করেছি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পৌরকর অনলাইনে প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা হয়েছে। ঘরে বসেই কর প্রদান করা যাবে।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, আমরা ডিএনসিসির অঞ্চলগুলোতে গণশুনানি করে দেখেছি নাগরিকদের রাস্তা, ড্রেনেজ ও সড়কবাতির চাহিদা অনেক সে অনুপাতে রাজস্ব আদায় নেই। রাজস্ব আদায় না হওয়ায় কারণ হিসেবে তিনি তিনটি বিষয় চিহ্নিত করেছি, প্রথমত ডিএনসিসির নতুন সংযুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের বেশিভাগ এলাকায় কর তালিকার অন্তর্ভুক্ত নেই। আবাসিক এলাকাগুলোতেও বাণিজ্যিক ব্যবহার হচ্ছে সেখান থেকে আমরা কোনো রাজস্ব পাচ্ছি না। নতুন করে হওয়া প্রচুর দোকান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে কর প্রদানের তালিকার আওতায় আনতে হবে। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, যারা কর দেয়া বা যারা কর দেয় না সবাইকেই সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে স্থায়ী লোকবল নিয়োগ করতে গেলে সেখানে তাদের বেতন ভাতা দিতে রাজস্ব ব্যয় হচ্ছে, অবকাঠামো উন্নয়নে রাজস্বের বড় অংশ ব্যয় হয়। এই ব্যয়কে মাথায় রেখে আদায়ের লক্ষ্য পূরণ ও পৌরকর প্রদান সহজিকরণ করতে এই পৌরকর মেলার আয়োজন।
প্রশাসক বলেন, আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি ডিএনসিসির এমন কিছু জায়গা আছে যেগুলো থেকে কর আদায় করা গেলে আমাদের উন্নয়ন ব্যয় এর চেয়ে আদায় বেশি হতো। উদাহরণসরূপ তিনি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, বসুন্ধরা সাথে আমরা আলোচনা করেছি তারা ট্যাক্স দিতে রাজি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের আমরা গনশুনানির মাধ্যমে তাদেরকে কর প্রদান উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি। মেলায় এসে কর দিলে তারা সুযোগ সুবিধা পাবে এবং এক টেবিলে বসে তাদের সকল সমস্যা সমাধান করতে পারবে। তারাও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ঢাকাকে যদি আমার পরিবর্তন করতে চাই তাহলে সিটি কর্পোরেশনকে সাবলম্বী হতে হবে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হলে সিটি কর্পোরেশন যেমন ২৪ ঘণ্টা আপনাদের পাশে আছে তেমনি আপনাদেরও ট্যাক্স দিয়ে আমাদের সাথে থাকতে হবে। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রমুখ।