** করপোরেট করের ছাড়ের সুফল পেতে হলে শর্ত হলো-সকল ধরনের আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকার অধিক ও বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকার উর্ধ্বে সকল প্রকার ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করতে হবে। এ শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ কোম্পানিকে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়
ব্যবসায়ীদের মাথাব্যথা বর্ধিত করপোরেট কর। দাবির প্রেক্ষিতে গত কয়েক অর্থবছর সরকার করপোরেট কর কমিয়েছে। সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত করপোরেট কর কমানো হয়েছে। কিন্তু করপোরেট কর কমানোর সুফল ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন না বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে আসছেন। কারণ, ‘শর্ত সাপেক্ষে’ করপোরেট কমিয়েছে সরকার। এই শর্তের কারণে ব্যবসায়ীরা এই সুফল পাচ্ছে না। ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘শর্ত’ শিথিল এবং করপোরেট কর কমাতে বিভিন্ন সময় এনবিআরকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতির কারণে এবং ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর ‘শর্ত’ শিথিল করা হতে পারে। তবে করপোরেট কর কমানো হবে না। বাজেটের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বিজনেস বার্তাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ব্যবসার পরিস্থিতি উন্নয়ন ও দেশে ব্যবসার প্রসারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দুই অর্থবছরের (২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬) জন্য করপোরেট করহার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার উন্নয়নে পরিকল্পনা করতে সহজ হবে। এতে ব্যবসায়ীরা সাধুবাদ জানালেও ‘শর্ত’ থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন। অপরদিকে, করপোরেট করের সুফল পেতে হলে যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তাহলো-করপোরেট করের ছাড়ের সুফল পেতে হলে শর্ত হলো-সকল ধরনের আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকার অধিক ও বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকার উর্ধ্বে সকল প্রকার ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করতে হবে। এ শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ কোম্পানিকে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়।
এনবিআর সূত্রমতে, এনবিআর গত কয়েক অর্থবছর সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। শর্ত থাকায় ব্যবসায়ীরা যার সুফল পাচ্ছেন না। আগামী অর্থবছর এসব শর্ত শিথিল করবে এনবিআর। শর্ত শিথিল করতে এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, এফআইসিসিআইসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে এনবিআরকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বর্তমানে ২০২৫-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে করপোরেট করের হার রয়েছে-শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে করপোরেট রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, সব ধরনের আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেন ৫ লাখ টাকার বেশি ও বার্ষিক মোট ৩৬ লাখ টাকার বেশি সব ধরনের ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। এ শর্ত পূরণ সম্ভব না হলে ওই কোম্পানির কর হবে সাড়ে ২২ শতাংশ। আবার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে এ করহার হবে ২০ শতাংশ। অন্যথায় করহার বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে ২২ শতাংশ। এছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানি এবং আইটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৪-এর সেকশন ২-এর ক্লজ (২০)-এর আওতাধীন অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড আয় ছাড়া সব ধরনের আয়ের ওপর ২৭ শতাংশ হারে আয়কর বিদ্যমান রয়েছে। তবে নগদ লেনদেনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে করহার বেড়ে হয় ৩০ শতাংশ। শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এক ব্যক্তি কোম্পানির আয়ের ওপর সাড়ে ২২ শতাংশ ধার্য করা হয়। তবে শর্ত পূরণ সম্ভব না হলে এ ক্ষেত্রেও করহার বেড়ে হয় ২৫ শতাংশ।
কোম্পানি নয় এমন ট্রাস্ট, তহবিল, ব্যক্তি-সংঘ এবং অন্যান্য করারোপযোগ্য সত্তার ক্ষেত্রে আয়ের ওপর সাড়ে ২৭ শতাংশ হারে আয়কর বিদ্যমান। তবে এ ক্ষেত্রে আরোপ করা শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে তা বেড়ে হয় ৩০ শতাংশ। এমসিসিআই, এফআইসিসিআইসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠন বলছে, দেশের ৮০ শতাংশের বেশি অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ব্যাংকনির্ভর নয় বিধায় লেনদের শর্ত পূরণ করা বড় এবং মাঝারি কোম্পানির ক্ষেত্রে খুবই কঠিন। তাই এ শর্ত পূরণ করে কমানো করের সুবিধা কেউই ভোগ করতে পারছেন না।
ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে বলা হয়েছে, কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের আয় বা প্রাপ্তি এবং ব্যয় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক লেনদেনের সীমারেখা নির্ধারণ করে দেওয়া অযৌক্তিক। এটি বাস্তবসম্মতও নয়। লেনদেন সীমানা নির্ধারণ ধরে করহার নির্ধারণ করা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পরপন্থী, যা আইনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করেছে সংগঠনগুলো। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানের অনেক ব্যয়কে করের আওতায় ধরা এবং উৎসে কর বেশি হওয়ায় কার্যকরী করপোরেট অনেক বেড়ে যায়। বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হলেও প্রকৃতপক্ষে তা ক্ষেত্রবিশেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। তাই বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে কার্যকরী পদ্ধতিতে করপোরেট কর কমানোর সুপারিশ করা হয়।
শর্তসাপেক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ করপোরেট কর কমিয়েছে সরকার। কিন্তু নানা শর্ত পূরণ করে ব্যবসায়ীদের অনেকেই কমানো করহারের পুরো সুবিধা নিতে পারছেন না। তাই শর্ত পরিহার করে কার্যকরী তথা প্রয়োগযোগ্যভাবে করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।
শিল্প মালিকরা বলছেন, করপোরেট কর কমানোর হলেও শিল্প সেই সুফল ভোগ করতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনানুষ্ঠানিক খাতের (ইনফরমাল ইকোনমি) প্রভাব বেশি। বহুজাতিক কমপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠানও এনবিআরের শর্ত পূরণ করতে পারবে না। তাই কর হ্রাসের সুবিধা শিল্প ভোগ করতে পারবে না। শিল্পকে সহায়তা করতে চাইলে শর্তহীনভাবে কর কমাতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের কোন কোম্পানির পক্ষে বর্তমান শর্ত পূরণ করার মাধ্যমে কর হ্রাসের সুবিধা নেওয়া সম্ভব নয়।
** করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে
** বাড়তে পারে সেবা মাশুল, সুদ, টোল ও ইজারামূল্য
** বাজেটে ফ্রিজ-এসিতে ভ্যাট বাড়ছে