কমলাপুর আইসিডি: ঠিকাদার নিয়োগে শর্ত শিথিল চবকের

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজধানীর কামালাপুর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে (আইসিডি) কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য সর্বশেষ ঠিকাদার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে একটি প্রধান শর্ত বাদ দিয়েছে। এতে পরিবহণ ও সরবরাহ খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির আশা জেগেছে এবং দীর্ঘদিনের একক আধিপত্যের অবসান ঘটার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) কামালাপুর আইসিডি পরিচালনার পাঁচ বছরের চুক্তির জন্য ৭ এপ্রিল নতুন করে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেছে, যেখানে আগের এক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বাদ দেওয়া হয়েছে।

সিপিএ-এর এই সিদ্ধান্ত এসেছে আইসিডি মালিক ও সরবরাহ খাতের সংশ্লিষ্টদের আনুষ্ঠানিক আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে। তারা যুক্তি দিয়েছিলেন, উক্ত শর্তটি ছিল পক্ষপাতমূলক ও প্রতিযোগিতার পরিপন্থি। বিষয়টি নিয়ে বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর সিপিএ শর্তটি প্রত্যাহার করে নেয়।পূর্ববর্তী দরপত্রগুলোতে একটি নির্দিষ্ট শর্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেখানে দরদাতাদের জন্য সমুদ্রগামী জাহাজ এবং রেলওয়ে ওয়াগনে কনটেইনার লোড করার অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল।

সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা জানান, এই শর্তের ফলে দেশে কার্যকর প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই কার্যত দরপত্র প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে এবং কেবল বর্তমান অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক ছাড়া আর কেউ অংশ নিতে পারত না।শিল্পখাতের নেতৃস্থানীয়রা সিপিএর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেন, এতে আরও প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে, প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং একচ্ছত্র আধিপত্যের ঝুঁকি কমে আসবে।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘আগের দরপত্রে রেলভিত্তিক কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকার শর্ত রাখা হয়েছিল। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও আইসিডি অপারেটররা একই ধরনের কাজ করেন এবং একই যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন। আমরা বিষয়টি লিখিতভাবে উত্থাপন করি এবং পরবর্তীতে বন্দর কর্তৃপক্ষ টেন্ডার শিডিউলগুলো বাতিল করে।’তিনি আরও বলেন, ‘নতুন দরপত্রে যেহেতু ওই শর্ত রাখা হয়নি, তাই এই খাতে যুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে। এতে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে, খরচ কমবে এবং এর সুফল পাবে ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা।’

বন্দর কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন কমালাপুর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) ১৯৮৭ সালে চালু হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে। চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে আনা আমদানি কনটেইনার এখানেই হ্যান্ডেল করা হয়। একইভাবে, রপ্তানি পণ্যও কামালাপুর থেকে ট্রেনযোগে বন্দর এলাকায় পাঠানো হয়।কমলাপুর ছাড়াও চট্টগ্রামে আরও ১৯টি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) রয়েছে, যার সবগুলোই বেসরকারি মালিকানাধীন।

বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাইফ পাওয়ারটেক ২০১৩ সাল থেকে একটি ১০ বছরের চুক্তির অধীনে কমলাপুর আইসিডিতে কনটেইনার ও কার্গো অপারেশন পরিচালনা করছে, যা ২০২৩ সালে শেষ হয়েছে।চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ১৮ জুন নতুন পাঁচ বছরের চুক্তির জন্য একটি নতুন দরপত্র আহ্বান করে। তবে এতে একটি ‘অন্যায়’ শর্ত রাখা হয়েছিল, যাতে নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা থাকার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এই শর্তটি কার্যত অধিকাংশ স্থানীয় আইসিডি মালিকদের অযোগ্য করে তুলেছিল।বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সেন্ট্রাল প্রোকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) এর কাছে আপত্তি জানানোর পর, জুনের দরপত্র বাতিল করা হয় এবং ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে নতুন করে তা প্রকাশিত হয়। তবে তাতে একই শর্ত থাকায় আরও সমালোচনা হয়।

আইসিডি মালিকরা অভিযোগ করেন, রেল ওয়াগন থেকে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের শর্তটি তাদের আইসিডি মালিকদের টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে দুরে রাখতে ইচ্ছাকৃতভাবে রাখা হয়েছিল। তাদের দাবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি নির্দিষ্ট কোম্পানিকে সুবিধা দিতে এই শর্তটি তৈরি করেছে। যদিও কমলাপুর আইসিডি-এর সাগরগামী জাহাজে কনটেইনার উঠানোর কোনো ভূমিকা নেই।রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ছাত্র–গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ওই দরপত্র বাতিল হয়ে যায়। মেয়াদ শেষে ডিপিএম পদ্ধতিতে আগের কোম্পানি সাইফ পাওয়ারকেটকে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ঠিকাদার হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, যোগ্য অপারেটর নিয়োগের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কমলাপুর আইসিডির কন্টেনার হ্যান্ডলিং ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।তবে, সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন নতুন পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘পিপিআর রুলস অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতা নেই এমন প্রতিষ্ঠানের যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এবারের টেন্ডার অনুযায়ী অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেবো।’তিনি দাবি করেন, আগের টেন্ডারগুলোতে সাইফ পাওয়ারটেককে সুবিধা দেওয়া জন্য বিশেষ শর্ত দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো সঠিক নয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!