কনটেইনার পরিবহনের খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে দুই বছর আগে সরকার আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছে। তবে গত দুই বছরে এই খাতে কোনো বিনিয়োগ হয়নি। তার পরেও বাংলাদেশে সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিবহন নিয়মিত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ২২ লাখ ৩৭ হাজার একক কনটেইনারে আমদানি–রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হয়েছে, যা ২০২৩–২৪ অর্থবছরের ২০ লাখ ৬৯ হাজার একক কনটেইনারের তুলনায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি।
কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের জন্য কনটেইনারবাহী জাহাজ প্রয়োজন। দেশে এই খাতে একমাত্র দেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হলো কর্ণফুলী গ্রুপ, যা ২০২০ সাল থেকে বিনিয়োগ করছে। বর্তমানে গ্রুপটির বহরে আটটি কনটেইনার জাহাজ রয়েছে। তবে জাহাজ থাকা সত্ত্বেও কনটেইনার খাতে দেশি কোনো নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়নি। দেশের বিনিয়োগের অভাবে পুরো ব্যবসা আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
শিপিং কোম্পানি ও বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩৪১টি কোম্পানি কনটেইনার খাতে ব্যবসা করেছে, যেগুলোর সবই বিদেশি। বাংলাদেশে তারা সরাসরি বা এজেন্টের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে। বিশ্বের শীর্ষ কনটেইনার কোম্পানিগুলো বাংলাদেশেও প্রভাবশালী। মূলত তিনটি কোম্পানির হাতে খাতের বড় অংশ রয়েছে—ডেনমার্কভিত্তিক মায়ার্সক লাইন, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক মেডিটেরানিয়ান কোম্পানি (এমএসসি) ও ফ্রান্সভিত্তিক সিএমএ–সিজিএম। এছাড়া জার্মানির হ্যাপাগ লয়েড, জাপানের ওশেন নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস (ওয়ান), চীনের কসকো, হংকংয়ের এসআইটিসি কনটেইনার লাইন এবং ওরিয়েন্ট ওভারসিস কনটেইনার লাইনও ব্যবসায় সক্রিয়।
সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের অন্যতম ব্যবসা হলো কনটেইনার খাত। বিদেশি কোম্পানিগুলো এই খাতে তিনভাবে কাজ করছে। প্রথমত, তারা কেবল শিপিং কোম্পানিগুলোর কাছে কনটেইনার ভাড়া দেয়, যেখানে ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারে দিনে প্রায় আড়াই থেকে পাঁচ ডলার আয় হয়। দ্বিতীয়ত, নিজস্ব কনটেইনারের পাশাপাশি ভাড়া নেওয়া কনটেইনার পরিচালনা করা হয়। এতে তারা আমদানি-রপ্তানিকারকের প্রতিনিধি থেকে ভাড়া নিয়ে পণ্য গন্তব্যে পৌঁছে দেয় এবং জাহাজের ব্যবস্থাপনাও নিজেরাই করে। শিপিংয়ে এ ধরনের কোম্পানিকে ‘নন–ভেসেল অপারেটিং কমন ক্যারিয়ার (NVOCC)’ বলা হয়, বাংলাদেশে এ ধরনের ৩০–৩৫টি বিদেশি কোম্পানি কাজ করছে। তৃতীয়ত, কিছু কোম্পানি নিজস্ব জাহাজে নিজের কনটেইনার ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করে। এই ক্ষেত্রে কনটেইনার ও জাহাজ—উভয়ই কোম্পানির। শিপিংয়ে এ ধরনের কোম্পানিকে ‘মেইন লাইন অপারেটর’ বলা হয় এবং পরিবহনভাড়ার পুরো আয় তারা পায়।
শুল্কছাড়েও দেশি বিনিয়োগ নেই
কনটেইনার পরিবহন খাতে দেশি উদ্যোক্তা তৈরি করতে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কনটেইনার আমদানিতে শুল্কছাড় সুবিধা দিয়েছিল সরকার। যেমন সাধারণ কনটেইনার আমদানিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট করভার ছিল ৩৭ শতাংশ। সেটি কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আবার হিমায়িত পণ্যের কনটেইনারের আমদানি শুল্ক ৩১ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়।
শুল্কছাড় দেওয়ার পর গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৫১৭টি কনটেইনার আমদানি করা হয়। গত অর্থবছরে আমদানি হয় ৬৭৮টি কনটেইনার। এসব কনটেইনার আমদানি হয়েছে মূলত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য। ভারী যন্ত্রপাতি বা বিশেষায়িত পণ্য পরিবহনের সুবিধার জন্য পণ্যসহ কনটেইনার কিনে আনা হয় উন্নয়ন প্রকল্পে, অর্থাৎ ব্যবসার জন্য একটি কনটেইনারও আমদানি করা হয়নি।