সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আবারও স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। দুবাই থেকে নিয়মিত স্বর্ণের চালান আসছে, যার বেশিরভাগই গ্রিন চ্যানেল পেরিয়ে বেরিয়ে যায়। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এ কাজে বিমানবন্দরের কিছু কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন, যদিও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করে। সম্প্রতি ১৭.৫ কেজি স্বর্ণের একটি চালান প্রধান ফটকের কাছে আটক করা হলে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। কাস্টমস কমিশনার মো. তাসনিমুর রহমান জানান, চোরাকারবারিরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় কাস্টমস কমিশনার রেপিং সিস্টেম উন্নত থাকার যুক্তি দিলেও, আগের একই ধরনের চালান ধরা পড়ায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে বিমানবন্দরের ম্যানেজার হাফিজ উদ্দিন জানিয়েছেন- বিমানবন্দর নিরাপত্তা যথেষ্ট থাকলেও ১৭.৫ কেজি স্বর্ণ কীভাবে গ্রিন চ্যানেল পার হলো, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। আটক হওয়া দুই ব্যক্তি, সৈয়দ আহমদ ও আপ্তাব উদ্দিন, দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবারে জড়িত ছিলেন এবং গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তদন্তে তারা দুবাইয়ে থাকা এক পাকিস্তানির সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়েছেন, যা যাচাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
তিনি জানান,সিলেটের স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ে তদন্ত চলছে। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার মাধ্যমে মূল তথ্য বের করার চেষ্টা করা হবে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের মতে, সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বর্ণ চোরাচালানি চক্র সক্রিয়, যা ওসমানী বিমানবন্দরের ভেতরের সিন্ডিকেটের সাথে সম্পর্কিত। বেশিরভাগ সদস্য বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছে, এবং সিলেটে আম্বরখানার সোনালী ব্যাংক এলাকায় তাদের সহযোগীর বাসা একটি স্বাপ্লাই এলাকা হিসেবে পরিচিত।
দুবাইয়ে অবস্থানকারী স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের প্রধান জালাল আহমদ, যিনি ১৫ বছর ধরে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ পাচার করছে। তার সহযোগী রাজা মিয়ার মাধ্যমে এসব স্বর্ণ ভারতে পাচার করা হচ্ছে। প্রায় ১০ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট এই চক্রের সঙ্গে জড়িত, যার মধ্যে বেশ কিছু সদস্যের নাম গ্রেপ্তার হওয়ার পর সামনে এসেছে। ২০১৭ সালে জহুর উদ্দিন এবং ২০১৮ সালে আব্দুল মুমিন আটক হন স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে। চার মাস আগে ১২০টি স্বর্ণের বারসহ শানুর নামের এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা একাধিক বার চক্রের নাম প্রকাশ করলেও প্রশাসন, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপের কারণে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে, এই চক্রের সদস্যরা প্রায়ই জামিন পেয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে আবারও পাচারের কাজে ফিরে যাচ্ছেন। চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে অবাধে স্বর্ণ পাচার চলছে এবং গ্রেপ্তারকৃতরা মামলার গ্লানি বহন করতে হচ্ছে, যদিও তাদের পিছনে অন্যরা থেকে যায়।