ওষুধশিল্পকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে সরকার

ওষুধশিল্পের মালিকরা মনে করছেন, সরকার মালিকদের অংশগ্রহণ ছাড়াই ওষুধ সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা শিল্পটিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে, তারা দ্রুত প্রায় এক হাজার ওষুধের অনুমোদন দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সমিতির নেতারা এ কথা জানান। ‘ওষুধশিল্প-কারখানা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে এই সভার আয়োজন করেছে স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম, যেখানে সহযোগিতা করেছে বাপি।

মতবিনিময় সভার শুরুতে বাপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। দেশের মানুষের প্রয়োজনের ৯৮ শতাংশ ওষুধই দেশে উৎপাদিত হয়। দেশের চাহিদা মেটিয়ে বাংলাদেশ প্রায় দেড়শর মতো দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন সহজে ওষুধ পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের মধ্যে ওষুধ নিয়ে অসন্তুষ্টি নেই। এই সাফল্যের পেছনে ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি অন্যতম ভূমিকা রেখেছে।

ওষুধশিল্প খাতের এই সাফল্য এখন হুমকির সম্মুখীন, মন্তব্য করেছেন শিল্প মালিকেরা। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সহসভাপতি ও রেনাটা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ কায়সার কবির সাংবাদিকদের জানান, স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের কিছু সুপারিশ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতি ও পদক্ষেপ ওষুধশিল্পকে আবারও আশির দশকের অবস্থা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

মতবিনিময় সভায় ওষুধশিল্পের মালিকরা অভিযোগ করেন, সরকারের তরফ থেকে গঠিত ১৮ সদস্যের টাস্কফোর্সে ওষুধশিল্পের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এছাড়া, ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটি ও আরও তিনটি কমিটিতেও শিল্প মালিকদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। যদিও আগে এসব কমিটিতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিত্ব ছিল।

বাপির কোষাধ্যক্ষ ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ওষুধশিল্পের মালিকেরা স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন, কিন্তু তাদের কথা কেউ শোনে না। মনে হচ্ছে এই শিল্পটিকে নিশানা করা হয়েছে এবং কেউ সেটিকে নষ্ট করতে চায়। সরকারের কিছু পদক্ষেপ ওষুধশিল্পকে আবারও অস্থিতিশীল করতে পারে। সম্প্রতি বাপির উদ্যোগে সাংবাদিকদের ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করানো হয়। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন এবং মালিকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এক প্রশ্নের জবাবে সভায় উপস্থিত অনেক শিল্প মালিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতি ওষুধশিল্পের জন্য ইতিবাচক না নেতিবাচক হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা ওষুধের কাঁচামালের বিষয়ে শিল্প মালিকদের কার্যক্রম জানতে চান। তারা জানতে চান, বাংলাদেশ ওষুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও কেন এখনও ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। 이에 বাপির মহাসচিব মো. জাকির হোসেন জানান, গজারিয়ায় এপিআই শিল্প পার্কের প্লটগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুব ছোট। বর্তমানে সেখানে ২৭ জন ওষুধ কারখানার মালিক রয়েছেন। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে কিছু প্লট একত্রিত করে আকার বৃদ্ধি করা হবে, ফলে মালিকের সংখ্যা কমে ১০-১২ জনে দাঁড়াবে। এছাড়া, গ্যাসের সংযোগ না থাকার কারণে এপিআই শিল্প পার্কে কাঁচামালের কারখানা গড়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক শিল্পমালিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বীকার করেন, একটি অসাধু চক্র প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ওষুধ নকল করে বাজারজাত করছে। এই চক্র শুধু শহরে নয়, এখন গ্রামাঞ্চলেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাপির নির্বাহী কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, নিপ্রো জেএমআই ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!