আলোচিত ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম) ও তার পরিবারের ৪২টি কোম্পানির ৫১০৯ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, দুদক তার পরিবারের এসব শেয়ার জব্দের আবেদন করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ১ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানকালে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪টি শেয়ারের মালিকানার তথ্য পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের মালিকানাধীন ৪২টি কোম্পানির ৫১০৯ কোটি টাকার শেয়ার হস্তান্তরের চেষ্টা করছিলেন। যদি তারা এতে সফল হতেন, তাহলে মামলার রুজু, আদালতে চার্জশিট দাখিল এবং বিচার শেষে অপরাধলব্ধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া ব্যাহত হতো। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও সরকারের অনুকূলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সুবিধার্থে আদালত শেয়ারগুলো ও সেখান থেকে উদ্ভূত সব মুনাফা অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি আলোচিত ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন অনিয়ম সামনে আসে।চট্টগ্রামভিত্তিক এ গ্রুপের চেয়ারম্যান এস আলমের বিরুদ্ধে ব্যাংক খাতে অনিয়ম, টাকা পাচার, আয়কর ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত শুরু করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। দুদকও ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় এস আলম ইসলামি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে তিনি আরও কয়েকটি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকের পর্ষদও নিয়ন্ত্রণে নেন। এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে এস আলম ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব ও বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা হয়েছে, শেয়ার লেনদেনও স্থগিত করা হয়েছে। নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলোর শেয়ার সরকারের মালিকানায় নেওয়ার কথা বলেছেন।
গত ২৯ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এস আলমসহ সাত ব্যবসায়ীর মালিকানা হস্তান্তর স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরকে চিঠি দেয়। এরপর ৩১ আগস্ট সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানায়, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের দুই ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে।