এস আলমের অ্যাকাউন্টে ২.৪২ লাখ কোটি টাকার লেনদেন

আলোচিত ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার পরিবারের কর ফাঁকির অনুসন্ধানে ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য উদ্ঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।

ব্যাংক খাতে এস আলমের ‘লুটপাটের’ তথ্য তুলে ধরে সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব জানান, ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করতে ১০টি কম্পিউটারে সাতজন কর্মকর্তা এক মাসেও এন্ট্রি শেষ করতে পারেননি। তার ভাষায়, এই অর্থের মধ্যে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ৩০ জুন পর্যন্ত পাঁচ বছর ব্যাংকে স্থিতি ছিল, আর ৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা সুদ হিসাবে জমা হয়েছে, যার অধিকাংশই গোপন রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলমান।

আজ বুধবার আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ও কর কর্মকর্মতাদের নিয়ে আয়কর গোয়েন্দার আয়োজিত ‘কর ফাঁকি ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে পারস্পারিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’র কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরেন আহসান হাবিব।এস আলমের দুই ছেলের ‘কালো টাকা সাদা’ করার সময় ব্যাংকের সহায়তায় জালিয়াতি হওয়ার তথ্যও এ সময় তুলে ধরেন তিনি।

সিআইসির মহাপরিচালক বলেন, এস আলমের দুই ছেলে জালিয়াতি করে ৫০০ কোটি টাকা হোয়াইট করেছে। কিন্তু ওই ব্যাংক আজ পর্যন্ত আমাকে তথ্য দেয়নি। তদন্ত করে দেখা গেল, এসআইবিএলের পটিয়া শাখায় ২১ ডিসেম্বরে পে অর্ডার কেটেছে। পরে ক্লিয়ারিং হয়। অথচ আইন শেষ হয়ে গেছে ৩০ জুন।তখন সে ব্যাংক ওলটপালট করে আগের ডেটে পে অর্ডার দেয়। এটা হেড অফিস থেকে করা হয়। আরো অনেক সমস্যা আছে। আমরা ধরেছি।ব্যাংক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আজও একটা রানিং ব্যাংক চেয়ারম্যানের ১২১ কোটি টাকা ব্লক করেছি।

এর পাশাপাশি ব্যাংক খাতে অনিয়মের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে এসব ‘অলিগার্ক শ্রেণির’ বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের কাজ করার অনুরোধ জানান সিআইসির মহাপরিচালক।বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হওয়া সব দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “আমার হাতে অসংখ্য ব্ল্যাংক চেক আছে অনেক ব্যাংকের। অনেক তথ্য আছে। ইনফরমেশন ইজ দেয়ার।”

এ সময় বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কর কমিশনার মো. খাইরুল ইসলামও একইরকম তথ্য সামনে আনেন। তবে তিনি কারো নাম বলেননি।তার ভাষ্য, অনেক স্টেটমেন্ট এনে দেখছি যে হিউজ টাকা শুধু ডেবিটই হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। টাকাটা শুধু উত্তলোন হচ্ছে। প্রতিদিন শুধু হিউজ টাকা উত্তলোন হচ্ছে এই করদাতাদের। এই টাকাগুলো কোথায় যাচ্ছে? কোথায় যায় এই প্রশ্ন যখন করি, আর উত্তর দিতে পারেন না।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান ম.আবদুর রহমান খান বলেন, এটি তাদের আইনি দায়িত্ব, এবং আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যারা ট্যাক্স কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করবেন না, তারা ডিফল্ট অ্যাসেসি হিসেবে গণ্য হবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে চার্জ কাটেন, কিন্তু ট্যাক্স সংক্রান্ত সহায়তায় গড়িমসি করেন। যদি তারা সহযোগিতা না করেন, তাহলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে। এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য বিপুল তথ্য প্রয়োজন এবং ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তথ্য ফাঁকির সুযোগ কমাতে ধীরে ধীরে তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় আনার পরিকল্পনার কথাও তিনি জানান, যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের ভিত্তিতে সরাসরি তথ্য পাওয়া যায়।

**এস আলম গ্রুপের ৫১০৯ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ

**এস আলম : ২ এলসিতেই পাচার ১০ হাজার কোটি টাকা

**পাচার করে ১৮ কোম্পানিতে এস আলমের বিনিয়োগ

**এস আলমের সেই দুই প্রতিষ্ঠানের বিন লক, হিসাব জব্দ

**এস আলম: আমদানি না করেই পাচার ১৬ কোটি টাকা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!