এনায়েতের ১২৬ কোটি টাকা সহ ২৩৫ বাসের সন্ধান

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ৪০টি ব্যাংক হিসাবে ১২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার বেশি জমার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, তার নিজ নামে ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে ২৩৫টি বাসের দালিলিক প্রমাণ মিলেছে, যা গোপনে বিক্রির চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন বিতর্কিত এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি পরিবহন খাতের মাফিয়া হিসেবে দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি। ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। টানা ১৫ বছর দেশের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক তার দখলে থাকলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রয়েছেন পলাতক। সড়কের একচ্ছত্র এ সম্রাটের বিরুদ্ধে প্রতিদিন গড়ে এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন বিতর্কিত এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি পরিবহন খাতের মাফিয়া হিসেবে দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি। ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। টানা ১৫ বছর দেশের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক তার দখলে থাকলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রয়েছেন পলাতক। সড়কের একচ্ছত্র এ সম্রাটের বিরুদ্ধে প্রতিদিন গড়ে এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ৪০টি ব্যাংক হিসাবে ১২৫ কোটি ৭২ লাখ ২৯ হাজার ২৮০ টাকা জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। যার অধিকাংশই তার ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসাব বলে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।

এ ছাড়া এনায়েত উল্লাহর নামে ৭০টি, স্ত্রী নার্গিস সামসাদের নামে ১০টি, মেয়ে চাশমে জাহান নিশির নামের তিনটি এবং এনা ট্রান্সপোর্ট নামের ১৫২টি পরিবহনসহ মোট ২৩৫টি বাসের মালিকানার দালিলিক প্রমাণ মিলেছে। যেগুলো আড়ালে থেকে বিক্রি করে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলেও দুদকের গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে দুদকের হাতে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য আসতে শুরু করে। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত বর্তমানে দুদকের হাতে রয়েছে। ইতোমধ্যে পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যদিও সরকারি খাতায় তিনি পলাতক রয়েছেন।‘আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে, এনায়েত উল্লাহ গং তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন এবং তাদের মালিকানায় থাকা গাড়িগুলো বিক্রির চেষ্টা করছেন। এ কারণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। দুদক থেকে হয়ত শিগগিরই তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করা হবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘অনুসন্ধান যেহেতু শুরু হয়েছে, দুদক আইন ও বিধি অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুসন্ধান টিম কাজ করছে। তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিলে আমরা গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেব।’

দুদক সূত্র জানায়, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়া এবং অর্থ পাচারের অভিযোগের বিপরীতে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তিনি পার পেয়ে যান। যদিও দুদকের অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা মেলে। যে কারণে ২০২১ সালের ১৪ জুন সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদক।

ওই বছরের অক্টোবরে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সম্পদের হিসাব জমা দেন, যেখানে তিনি ২১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। সম্পদের উৎস হিসেবে তিনি এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেড, সোলার এন্টারপ্রাইজ, এনা শিপিং, এবং এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির নাম উল্লেখ করেন। এদিকে, দুদক তাদের অনুসন্ধানের দ্বিতীয় দফা কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

ব্যাংক হিসাবে যত টাকা
সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুসারে, খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ৪০টি ব্যাংক হিসাবে ১২৫ কোটি ৭২ লাখ ২৯ হাজার ২৮০ টাকা জমার তথ্য মিলেছে। যার মধ্যে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বিএসএমএমইউ শাখায় তিন কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪০ টাকা, সিটি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় ৫৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, একই ব্যাংকের পল্লবী শাখায় ১৪ লাখ সাত হাজার টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে ১০ কোটি ২০ লাখ ২৫ হাজার টাকা, একই হিসাবের বিপরীতে পাঁচ কোটি ৩৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকার এফডিআর, ব্র্যাক ব্যাংকের তিন হিসাবে প্রায় ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকার এফডিআর, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার এফডিআর, সাউথইস্ট ব্যাংকে দুই কোটি ৭০ লাখ টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং এনআরবিসি ব্যাংকে এক কোটি ১৪ লাখ টাকা জমার তথ্য মিলেছে।

এ ছাড়া এনা মোটরস নামে ব্যাংক আল-ফালাহর ধানমন্ডি শাখায় ২১ কোটি ২৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, একই প্রতিষ্ঠানের নামে অপর হিসাবে ১৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, একই ব্যাংকের আরেক হিসাবে সাত কোটি ৬৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা এবং এনা এন্টারপ্রাইজ নামে ব্যাংক আল ফালাহর ধানমন্ডি শাখায় দুই কোটি ৪৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা থাকার তথ্য মিলেছে।

এদিকে, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, স্ত্রী নার্গিস সামসাদ, ছেলে রিদওয়ানুল আশিক নিলয় ও মেয়ে চাশমে জাহান নিশির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম এ আবেদন করেন।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস থেকে দৈনিক এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এ ছাড়া তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ আয়ে কৃষিজমি, ফ্ল্যাট, প্লট ক্রয়সহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। তাদের নামে বিপুল পরিমাণ অস্থাবর সম্পদ রয়েছে বলেও জানা গেছে। এখন তারা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।

এর আগে দুদকে জমা দেওয়া সম্পদের বিবরণীতে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ১৫০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার সম্পদের হিসাব দেন। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে—রাজধানীর মিরপুরে ৮.২৫ বিঘা জমিতে ছয়তলা বাড়ি, মিরপুরের মনিপুর পাড়ায় ৮ শতাংশ জমিতে ছয়তলা বাড়ি, ধানমন্ডির ১১ নম্বর রোডের ৬২ নম্বর বাড়ির ৪/এ নম্বরে তিন হাজার ৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বসুন্ধরা সিটিতে ১৫১ বর্গফুটের একটি দোকান, দক্ষিণখানে দুটি জায়গায় যথাক্রমে ৭৮ শতাংশ ও ১০ শতাংশ জমি, কেরানীগঞ্জে ৪০ কাঠা এবং রূপগঞ্জে ১০ কাঠা জমি। এ ছাড়া গাজীপুরের দনুয়ায় তিন কোটি ৬০ লাখ টাকার জমি এবং ফেনীতে ১২ শতাংশ জমির তথ্যও তিনি উল্লেখ করেন।

২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়া এবং অর্থ পাচারের অভিযোগের বিপরীতে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তিনি পার পেয়ে যান। যদিও দুদকের অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা মেলে। যে কারণে ২০২১ সালের ১৪ জুন সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদক

জমা দেওয়া সম্পদের বিবরণীতে এনায়েত উল্লাহ এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেডের নামে ৮০টি বাসের মালিকানার তথ্য দেন। তবে সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর ও আশপাশে চলাচলকারী তানজিল পরিবহন, বসুমতি পরিবহন, সোলার এন্টারপ্রাইজ, এনা শিপিং ও এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানিতে বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে তার।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!