জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাঁচ সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। রোববার (২৯ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়েছে। অপরদিকে, সচিবালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি আলাপ-আলোচনা করে সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আন্দোলনকারীসহ সবার কথা শুনে সুপারিশ করবে, কীভাবে কী করা যায়।’ রোববার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ কমিটি গঠন করা হয় বলে সাংবাদিকদের জানান অর্থ উপদেষ্টা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চলমান সংকট দ্রুত নিরসনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত, শ্রম ও কর্মসংস্থান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা। তবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিটির কার্যপরিধি বা ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া এই কমিটিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ থাকছেন না। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, জনস্বার্থ রক্ষায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনের সব ধরনের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে।
অপরদিকে, কমিটি গঠন বিষয়ে জানতে চাইলে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরসহ সব বন্দর যেন চালু থাকে, ব্যবসা-বাণিজ্য যেন সচল থাকে এবং রাজস্ব আহরণ যেন বাঁধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য আমাকে প্রধান করে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ এই কমিটি সোমবার থেকেই কাজ শুরু করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ নোটিফিকেশন ইস্যু করেনি। নোটিফিকেশন ইস্যু হলেই কাজ শুরু করবো।’
এর আগে, সচিবালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি আলাপ-আলোচনা করে সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আন্দোলনকারীসহ সবার কথা শুনে সুপারিশ করবে, কীভাবে কী করা যায়।’ কমিটিতে কারা থাকছেন—এ প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কমিটির গেজেট জারি করবে। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্যদিকে, এনবিআরের সব শ্রেণির চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, আন্দোলনরত কর্মকর্তারা কাজে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ‘কঠোর ব্যবস্থা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে—সেই প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই বলব না। এটা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কোনো কমেন্ট করবো না। আর বেশি কথা না।’ সভায় ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার কথা জানিয়েছেন বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, আইসিসিবি’র সহসভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, মেট্রো পলিটন চেম্বারের (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, এমসিসিআইর সহসভাপতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতির তাসকিন আহমেদ প্রমুখ। এছাড়া, বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানও উপস্থিত ছিলেন।
** ‘শাটডাউন কর্মসূচি করুক, কোন বৈঠক হবে না’
** কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে না ফিরলে কঠোর হবে সরকার
** মার্চ টু এনবিআর স্থগিত
** অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বিকালে বসছে ঐক্য পরিষদ
** এনবিআরে দ্বিতীয় দিনেও চলছে শাটডাউন কর্মসূচি
** অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসবে ২০ জন প্রতিনিধি
** চেয়ারম্যানের অপসারণ নয়, আলোচনার তাগিদ
** শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর চলমান থাকবে
** কমপ্লিট শাটডাউন চলছে, অবরুদ্ধ এনবিআর
** জনগণ সেবা পাচ্ছেন না, নিজ অফিসে না থাকলে শাস্তি