বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের জন্য জারি করা অধ্যাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন এক আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ শনিবার (১৭ মে) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন। তিনি জানান, বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর নেতৃত্বে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে চলতি সপ্তাহেই রিটের শুনানি হতে পারে।
গত ১২ মে জারি করা এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে গঠন করা হয় দুটি নতুন বিভাগ—‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’। ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ শিরোনামের ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কর আইন প্রয়োগ ও রাজস্ব আদায়ের পরিবেশ পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে রাজস্ব নীতি বিভাগ। আর রাজস্ব আদায়ের মূল কার্যক্রম পরিচালনা করবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২৬, ৩১ ও ২৯(১) অনুচ্ছেদের আলোকে কেন ওই অধ্যাদেশটি সাংবিধানিকভাবে সাংঘর্ষিক ও কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারির অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, রুল জারি হলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সংস্কার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রস্তাব প্রকাশে বিবাদীদের নির্দেশনা দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়া, রিট বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অধ্যাদেশের কার্যক্রম স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। রিটে আইনসচিব ও অর্থসচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোনো আইন বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। ৩১ অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার এবং ২৯(১) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের চাকরিতে নিয়োগ বা পদ লাভে সকল নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
রিটের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আইনজীবী জুয়েল আজাদ বলেন, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ আলোচনার আগে হঠাৎ করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, যা প্রক্রিয়াগতভাবে সঠিক নয়। তিনি জানান, এতে ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশে গঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করা হয়েছে, যা বাতিল করতে হলে সঠিক ও ন্যায্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত ছিল। জুয়েল আজাদ আরও বলেন, রাজস্ব-সংক্রান্ত বিভিন্ন পক্ষ ইতিমধ্যে সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু সেসব প্রস্তাব প্রকাশ বা বিবেচনা না করেই সরকার অধ্যাদেশ জারি করেছে। তার মতে, এনবিআর বিগত সময়ে কার্যকরভাবে কাজ করেছে, ফলে এটি বিলুপ্ত না করে সংস্কারের মাধ্যমে উন্নয়ন করা যেত।
একটি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের পরিচিতি বিলুপ্ত করার উদ্যোগ সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক—এমন মন্তব্য করে আইনজীবী জুয়েল আজাদ বলেন, নতুনভাবে গঠিত দুই বিভাগের শীর্ষ পদগুলো প্রশাসন ক্যাডার থেকে পূরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা পদোন্নতি ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন, যা সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদের সাম্যের নীতির পরিপন্থী। এসব যুক্তির ভিত্তিতেই রিটটি দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।