জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতি ও প্রশাসন বিভাগ পৃথক করার প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে বিজনেস বার্তাকে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। এনবিআরের এই দুই বিভাগ পৃথক হলে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও গতিশীলতা বাড়বে বলে মনে করেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। অধ্যাদেশ রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হলে ৫৩ বছরের পুরোনো এই সংস্থা বিলুপ্ত হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপদেষ্টা পরিষদের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর কমিটি গঠনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নিয়োগ হবেন। এর ফলে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগে বন্ধ হবে সরকারের হস্তক্ষেপ। একক ইচ্ছায় কাউকে ওএসডি বা চাকরিচ্যুত করা যাবে না। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিদ্যমান এনবিআরকে ভেঙে দুটি বিভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা-এ দুটি কার্যক্রমকে পৃথক্করণের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। দুই বিভাগের সচিব হবেন আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা সচিব বা জ্যেষ্ঠ সচিবের মর্যাদা পাবেন। নীতি বোর্ডের সদস্যরা পদমর্যাদা পাবেন গ্রেড-১।
সূত্রমতে, খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যান এই বোর্ডের প্রশাসন, আর্থিক, উন্নয়ন ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। দেখভাল করবেন বোর্ড সদস্যদের কাজ। তিনি বোর্ড সভা ও উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে সভারও আয়োজন করবেন। চেয়ারম্যানকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এই অধ্যাদেশে সংজ্ঞায়িত বোর্ডের সদস্য হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর অনুবিভাগের দু’জন এবং শুল্ক, মূসক ও আবগারি অনুবিভাগের দু’জন করে কর্মকর্তা নীতি বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাবেন। তাদের এনবিআরের সদস্য বা কমিশনার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এতে বোর্ডের চেয়ারম্যান হতে পারবেন না আমলারা। তবে স্বাধীনতার পর বেশির ভাগ সময় আমলারাই ছিলেন এনবিআরের চেয়ারম্যান।
উল্লেখ্য, কর ব্যবস্থায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে বিশ্বের অনেক দেশই কর নীতি ও কর সংগ্রহ কার্যক্রমকে পৃথক করার পথে হেঁটেছে। বাংলাদেশে এ উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ২০০৭-৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। যদিও পরে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও রাজস্ব কার্যক্রম সংস্কারের আওতায় কর নীতি ও কর সংগ্রহ কার্যক্রমকে পৃথক করার উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের মতো বহুজাতিক দাতা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও এটি বাস্তবায়নের জন্য চাপ রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ গঠনের প্রস্তাব সংবলিত একটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়ন করেছে সরকার।
আরো পড়ুন-
** বিলুপ্ত হচ্ছে এনবিআর, কমবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ
** এনবিআর ভেঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনে দুই বিভাগ হচ্ছে
** স্বতন্ত্র বিভাগ গঠনে রাজস্ব আহরণ বাড়বে ?
** এনবিআর ভেঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনে দুই বিভাগ হচ্ছে
** প্রশাসন ও নীতি উইং পৃথক করার সুপারিশ
** রাজস্ব কমিশন নয়, বিভাগ হবে
** আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস থেকে হবে ‘চেয়ারম্যান’
** এনবিআর সংস্কারে পাঁচ সদস্যের ‘পরামর্শক’ কমিটি
** এনবিআর দুই ভাগ হচ্ছে, ঈদের আগেই অধ্যাদেশ