আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৫৫০ কোটি ডলারের ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে একগুচ্ছ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। এসব সংস্কারের মধ্যে রয়েছে কর প্রশাসনে দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি জনমত জরিপ পরিচালনা এবং বিদ্যুৎ, সার, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স খাতে দেওয়া ভর্তুকি ও প্রণোদনা ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, প্রতি অর্থবছর শেষে ছয় মাসের মধ্যে কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে।
গত সোমবার দুটি কিস্তির অর্থ ছাড়ের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। এতে পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের শর্ত এবং বাংলাদেশের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। আইএমএফ পরবর্তী কিস্তির জন্য মোট ৩৩টি শর্ত দিয়েছে, যার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো—আগামী অর্থবছরে সরকারকে অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা কর রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে।
চলতি মাসের শুরুতে দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের অনুরোধ জানিয়ে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার কাছে একটি চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ। এতে বিনিময় হার নীতি, ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কার, রাজস্ব আহরণ জোরদার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আইএমএফের প্রতিবেদনে এই অঙ্গীকারগুলোর উল্লেখ রয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদে সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি কাঠামোগত সংস্কার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা হবে। বিশেষ করে নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থার পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণে ঘাটতি দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতির স্মারকে (এমইএফপি) সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে—প্রতি দুই থেকে তিন বছর অন্তর জনমত জরিপ চালানো, যাতে কর প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ানো যায়। এছাড়া কর্মকর্তাদের জন্য নৈতিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে এবং প্রতিবছর তারা আনুগত্যের ঘোষণা প্রদান করবেন।
এনবিআরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতি অর্থবছর শেষে ছয় মাসের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় গৃহীত ব্যবস্থার পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্মকর্তাদের জন্য একটি আচরণবিধি ও নৈতিকতা সনদ প্রকাশেরও উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া রাজস্ব আহরণ ও নীতি প্রণয়নে এনবিআরকে দুটি পৃথক বিভাগে ভাগ করার প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি এবং একটি বিস্তারিত কর্মকৌশল প্রকাশ করা হবে। এতে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে ভ্যাট ও আমদানি শুল্কে করছাড় কমিয়ে আনা শুরু হয়েছে। তাছাড়া আদর্শ ভ্যাটহার ১৫ শতাংশ বাস্তবায়নের আওতা বাড়িয়েছে। বেশ কিছু পণ্যে শুল্কায়নের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে কর আহরণ অটোমেশন এবং প্রশাসনের উন্নয়নসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে বাড়তি ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসবে বলে সরকার মনে করছে।