জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের পেছনে আওয়ামী সরকারের সময়কার কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীর ইন্ধন থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বুধবার (২৫ জুন) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সন্দেহের কথা জানান।
সরকার এনবিআরকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে রাজস্ব নীতি শাখা ও রাজস্ব বাস্তবায়ন শাখা হিসেবে নতুন বিভাগ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রশাসন ক্যাডারের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ বাড়বে—এমন আশঙ্কা থেকেই বিরোধিতা করছেন বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ প্রেক্ষিতে আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে চলছে আন্দোলন ও কর্মবিরতি। যদিও সরকার ইতোমধ্যে এনবিআর বিভক্তির অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন আগামী জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে।
এই প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্যারিয়ার নিয়ে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তাদের ক্যারিয়ারে কোনো সমস্যা হবে না। বরং এনবিআর একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে গড়ে উঠলে তাদের মর্যাদা বাড়বে, ক্যারিয়ারের সুযোগ-সম্ভাবনা আরও বিস্তৃত হবে এবং প্রমোশনও আগের চেয়ে ভালো হবে। এখন তাদেরকে কে কী বোঝাচ্ছে, সেটা ভেতরের বিষয়—আপনারাই ভালো জানেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা যে পদক্ষেপ নিয়েছেন—কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা—এটা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে, বিশেষ করে এনবিআরের কেউ আগে কখনও করেননি। বিষয়টি শুধু ব্যক্তিগত নয়, পুরো দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য, রাজস্ব এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। আমি বলেছি, এমন কোনো সমস্যা নেই যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে না।’
আন্দোলনে কিছু ব্যবসায়ীর ইন্ধন রয়েছে কি না—এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এনবিআরে সংস্কারের পেছনে কারণ রয়েছে, কারণ অতীতে এখানে অনেক ধরনের অসঙ্গতি ছিল। জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার অভাব ছিল স্পষ্ট। আগের সরকারের সময় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ব্যবসায়ীরা বারবার সুবিধা পেয়েছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে ভালো এবং সৎ ব্যবসায়ীরা সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এনবিআর কখনোই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারেনি।’
অতএব আমি অনুমান করছি, এই ঘটনার পেছনে ব্যবসায়ীদের কিছু স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। নইলে হঠাৎ করে কর্মচারীরা ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত বিষয়ে এতটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো কেন? যদি অন্য কোনো বিষয় না থাকে, তাহলে এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক নয়। অবশ্য এটাও আমার ব্যক্তিগত ধারণা, আমি সরাসরি ব্যবসায়ীদের দোষ দিচ্ছি না। আন্দোলনের মাধ্যমে এনবিআর কর্মকর্তারা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা তো হ্যাঁ, তবে আমরা আপাতত ধৈর্য ধরছি। সরকারি চাকরিতে অনেক নিয়ম-কানুন মানতে হয়, শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হয়।